হরিণের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে কমলগঞ্জের বনাঞ্চল

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:১১

পিন্টু দেবনাথ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বনাঞ্চলগুলো এখন হরিণের জন্য অনিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। উপজেলার রাজকান্দি বনরেঞ্জের অধীন কুরমা, আদমপুর ও রাজকান্দি বনাঞ্চলের হরিণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। বনাঞ্চলে অবাধ যাতায়াতের করণে লোকালয়ে বেরিয়ে এসে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ছে হরিণ। বিজিবি ও বন বিভাগ গত ২১ দিনে আহতাবস্থায় দুটি মায়া হরিণ উদ্ধার করলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি মারা যায়। সম্প্রতি কুরমা, আদমপুর ও রাজকান্দি বনাঞ্চল সংলগ্ন গ্রাম ঘুরে এ চিত্র পাওয় যায়।

কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা, আদমপুর ও রাজকান্দি বনাঞ্চলটি একসময় গভীর জঙ্গল ছিল। বর্তমানে সেটি আর নেই। একেবারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বনাঞ্চলের সাথে এ বন সংযুক্ত রয়েছে। এই বনে হরিণ, বানরসহ নানা জাতের বন্য প্রাণী রয়েছে। এই বনেই আবার প্রাকৃতিক জলপ্রপাত হামহাম আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে বনের ভিতর লোক চলাচল বেড়ে গেছে। বনাঞ্চলের বাঁশ ইজারা দেওয়ার ফলে বাঁশ শ্রমিক, গাছ চোর চক্রের সদস্য ও সুযোগ সন্ধানী শিকারীদের অবাদ প্রবেশের ফলে বনের মায়া হরিণ প্রায় লোকালয়ে বেরিয়ে এসে ধরা পড়ে। 

আলাপকালে আদমপুরের সমাজ সেবক হাজী জয়নাল আবেদীন ও লেখক-সাংবাদিক শাব্বির এলাহী বলেন, কুরমা, আদমপুর ও রাজকান্দি এই তিনটি সংরক্ষিত বন থেকে শিকারীরা প্রায়ই হরিণ ধরে জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। এমনকি গোপনে এক হাজার টাকা কেজি ধরে হরিণের মাংস বিক্রি করা হয়। 

বনের হরিণ শিকার প্রতিরোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে না বলে আদমপুর, নঈনারপার, কাঁঠালকান্দি ও রাজকান্দি বনাঞ্চল সংলগ্ন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানান, একটি প্রভাবশালী চক্র হরিণ শিকারের সাথে যুক্ত। 

তাছাড়া প্রায় পাঁচ বছর আগে আদমপুর বনাঞ্চল থেকে একটি হরিণ কিনে জবাই করে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাবার সময় কমলগঞ্জ পৌরসভা এলাকার চন্ডিপুরে বন তল্লামি চৌকিতে জবাই করা হরিণসহ মাইক্রোবাসটি আটক করা হলেও হরিণ ক্রয়কারী ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে জবাই করা হরিণটি উদ্ধার করে সেটিকে মাটিতে পুতে রেখেছিল বনকর্মীরা। আর হরিণ পরিবহনের দায়ে ভাড়া করা মাইক্রেবাসের নগদ সাত হাজার টাকা জরিমানাও রাজস্ব আকারে আদায় করা হয়েছিল। একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে এ ঘটনাটি সে সময় ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি বনাঞ্চল থেকে একটি মায়া হরিণ শাবক বেরিয়ে লোকালয়ে দুর্বৃত্তের হাতে ধরা পড়েছিল। দুর্বৃত্তরা হরিণ শাবকটিকে জবাই করার জন্য ছুরি ব্যবহার করলেও কাঠালকান্দি বিজিবি সদস্যরা দ্রুত অভিযান চালালে হরিণটিকে ফেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। বিজিবির মাধ্যমে আহতাবস্থায় এ হরিণটিকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গলে বণ্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করলেও পরদিন বৃহস্পতিবার এ হরিণটি মারা যায়। 

এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পর বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুরমা গভীর বনাঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতার একটি মায়া হরিণ বেরিয়ে লোকালয়ে আসে। চাম্পারায় চা বাগানে সুযোগ সন্ধানীরা হরিণটিকে ধরতে সাড়াশি অভিযান চালায়। পরে আহতাবস্থায় হরিণটি ধরে পড়ে। দুর্বৃত্তরা হরিণটিকে ধরে বস্তায় ভরে নিয়ে যাবার খবর পেয়ে কুরমা বনিবট কর্মকর্তা চাম্পরায় চা বাগান থেকে হরিণটিকে উদ্ধার করে। বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটায় চিকিৎসার জন্য উদ্ধার হওয়া হরিণটিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া বন্য প্রানী নিরাময় কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়।

রাজকান্দি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর চৌধুরী বলেন, তিনি নতুন এ রেঞ্জে যোগদান করেছেন। অফিস নথি না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে কুরমা, আদমপুর ও রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হরিণ নিরাপত্তাহীনতায় আছে তা নিশ্চিত করে বলেন, হয়তো বনের মধ্যে তাড়া খেয়ে হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

শ্রীমঙ্গলস্থ ৪৬ নং বিজিবি ব্যাটেলিয়নের সহ অধিনায়ক মেজর মো: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর গুরুতরভাবে আহত হরিণ শাবক কাঁঠালকান্দি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে শেষমেষ বাঁচানো যায়নি। পরে উপজেলা ভ্যাটেনারী সার্জন ময়না তদন্ত করে জানিয়েছিলেন ছুরির আঘাতে হরিণ শাবকের গলার রগের বেশীর ভাগ কেটে যায় ও পায়ে আঘাত বেশী ছিল বলে সেটি মারা যায়। 
 
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, তিনিও সম্প্রতি কমলগঞ্জে যোগাদান করেছেন। এ বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।