খুমেক হাসপাতালে একইসাথে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগী

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৫

শেখ নাদীর শাহ্, খুলনা

খুলনায় প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা। যার ফলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিট করা হলেও মাত্র ১২টি শয্যা নিয়ে ওই ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এর ফলে শয্যা সংকটে বাধ্য হয়েই একই ফ্লোরে সাধারণ রোগীদের সাথে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা নিতে হচ্ছে। এনিয়ে চাপ সামলাতে খানিকটা বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসকেরাও। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তি সংখ্যা ছিল ৪৬ জন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ জন।

খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাস থেকে হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৭ জন। যার মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন।

হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হলেও বেড অমিল হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই চিকিৎসা নিতে বারান্দার ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে তাদের। মাদুর, কাঁথা বালিশ বিছিয়ে অবস্থান নিতে হচ্ছে। দূর-দূরন্ত থেকে আসতে হয়। রোগীর সাথে স্বজনেরাও আসে। চলার পথে সকলকেই এভাবে থাকতে হচ্ছে। এতে উভয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও পাশে মশারি টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। তাদের আলাদা ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়। এছাড়া বেড বাড়ানোর দাবিও জানান তারা।

বাগেরহাট পানবাড়িয়া গ্রামের সুলতান শেখ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার এক নিকটাত্মীয় বলেন, সুলতান শেখ গত শনিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রবিবার সকালে তাকে বাগেরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বুধবার সকালে ভর্তি হয়। এখন কিছুটা সুস্থ রয়েছেন তিনি।

খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একটি ওয়ার্ডে মশারি দিয়ে যদি ডেঙ্গু রোগীকে সুরক্ষিত করতে পারি, আর তার পাশে যদি অন্য কোনো রোগী রাখা হয় তাতেও ডেঙ্গু ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। হাসপাতালে মোট ৪৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। ডেঙ্গু রোগীকে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখার ফলেও যদি ছড়াতো তাহলে কিন্তু হাসপাতলটি মহামারি আকার ধারণ করতো।

তিনি আরও বলেন, মানুষ ভুল বুঝে আতঙ্কিত হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। আপনি সচেতন হলেই ডেঙ্গু আপনার কিছু করতে পারবে না। শুধুমাত্র নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে মশার কাছ থেকে। তাহলে আপনি ডেঙ্গু মুক্ত থাকতে পারবেন।

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান বলেন, ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ। এবার সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে যেসব রোগী এসেছেন তারমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের রোগী কম। এখানে যে রোগীগুলো আছে, তা সবই অন্য জেলার। তাদের অনেকেই ঢাকা থেকে আসা অথবা স্থানীয়ভাবেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে অবকাঠামো ও শয্যা সংকট রয়েছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১২টি বেড রয়েছে। বর্তমানে ৪৫-৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে বিভিন্ন ইউনিটের বারান্দার ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের সকলকেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। এডিস মশা সকালে অথবা বিকেলে কামড়ায়। মশা থেকে রক্ষায় আমরা মশারি টাঙিয়ে শোবো। যেখানে মশার জন্ম নেয়, এমন স্থানের পানিগুলো ফেলে দিব। মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে, এ জন্য ফুলের টব, ছাদের খোলা জায়গাসহ যেখানে পানি জমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবো।

তিনি আরও বলেন, ৫০০ বেড নিয়ে খুমেক হাসপাতাল। ১ হাজার ৪৭৯ জন রোগী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। যা প্রায়ই ১৫০০ সংখ্যা পেরিয়ে যায়। এরমধ্য ডেঙ্গু রোগীও আছে। ৫০০ বেডের হাসপাতালে এতো রোগীর সেবা দেওয়া আসলেই চিকিৎসকদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। তবুও তারা রোগীর সঠিক সেবাদানের চেষ্টা করে চলেছেন বলেও জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত