অযত্নে পড়ে আছে ‘সরকার বাড়ি’
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০১
সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শাল্লা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের ‘সরকার বাড়ি’। ১৯৩৭ সালে এই সরকার বাড়িটি নির্মাণ করেন তখনকার জামিদার ভারত চন্দ্র সরকার। তবে বাড়িটির অন্য আরেকটি পরিচিতি হল দুর্গম শাল্লা উপজেলার প্রথম দালান বাড়ি হিসেবে। যার আগে এ উপজেলায় পাথর, ইট, বালুর কোন বাড়িই ছিল না। ২ একর জায়গার উপর ৮টি করে বড় বড় কক্ষ দিয়ে দুইতলা বিশিষ্ট এই বাড়িটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা জ্বালিয়ে দেওয়ার পর থেকেই পরে রয়েছে অবহেলায়। পরিবার স্থানীয় এবং জনপ্রতিনিধিদের দাবি বাড়িটি সংরক্ষণে সরকারের বিশেষ দৃষ্টির। তারা বলছেন এভাবে অযত্নে অবহলোয় সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক সরকার বাড়িটি পরে থাকলে বিলীন হয়ে যাবে, পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে না বাড়িটির ইতিহাস।
সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওর অধ্যুষিত উপজেলা শাল্লার ৪নং ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অযত্নে অবহেলায় থাকা বাড়িটির দরজা জানালা সবই ভেঙ্গে গেছে, তাছাড়া বাড়িটির ছাদের দেওয়ালে ফাটল ধরাসহ খুলে পড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গার দেয়ালের প্রলেপ। তবে বাড়িটির দেওয়ালে এখনও রয়ে গিয়েছে শিল্পীর অনিন্দ্য কারুকাজ। দেওয়ালে আছে বারুদ দিয়ে পাকিস্তানিদের পুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষত। ২ একর জায়গাজুড়ে বাড়ির সীমানা থাকলেও এখন সেটিতেই যুদ্ধের পর থেকে বসবাস শুরু করেছেন স্থানীয়রা। তবে সবার দাবি বাড়িটি এ উপজেলার জন্য গুরুত্ব বহন করায় বাড়িটি সংরক্ষণের প্রয়োজন।
কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক মেম্বার আরব আলী বলেন, এই বাড়িটি শাল্লা উপজেলার প্রথম দালান বাড়ি। এখানে জমিদার ভারত চন্দ্র সরকার থাকতেন, তিনি এ এলাকায় খুব জনপ্রিয় একজন জমিদার ছিলেন। তিনিই বাড়িটি তৈরি করেন। এ বাড়িতেই বড় পূজো হতো, বাড়ির উঠানে বসতো বিচার- আড্ডা। তবে যুদ্ধের সময় এ বাড়িতে পাকিস্তানিরা আগুন দিয়ে দেওয়ার পর থেকে এখানে কেউ থাকে না। এটি সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক বাড়ি, এটি সংরক্ষণ প্রয়োজন। পরিবারের সদস্যরা এবং সরকারের দৃষ্টি দিলে বাড়িটি ইতিহাসের জন্য সংরক্ষিত হবে। সরকার বাড়ির পাশের বাসিন্দা কৃষক নিরঞ্জন দাস বলেন, বাড়ির দেওয়ালের আস্তর সব খুলে যাচ্ছে, দেওয়ালেও ফাটল আছে এছাড়া আগুন দিয়ে জ্বালানোয় বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পরিবারের লোকজনরা মাঝে মধ্যে আসেন, আমাদের দেখে যান। এ বাড়িটি সংরক্ষণ করা জরুরি।
ভারত চন্দ্র সরকারের নাতি নিউইউর্ক পুলিশের অফিসার নিয়ন চৌধুরী কল্লোল বলেন, বাড়িটি আমার দাদা তৈরি করেছিলেন। এই বাড়িতেই আমার বাবার জন্ম হয়েছিল, এখানে আমার বাবার অনেক স্মৃতি রয়েছে তবে পাকিস্তানিরা বাড়িটিকে দুইবারের চেষ্টায় আগুন লাগায়, প্রথম আগুন না জ্বলায় তারা পরবর্তীতে গান পাউডার দিয়ে বাড়িটি জ্বালিয়ে ফেলে। আমরা পরিবারের সবাই জীবনের তাগিদে বাইরে থাকায় বাড়িটির দিকে তেমন একটা নজর দেওয়া হয় না। তবে আমি চাইব বাড়িটি যেনো সরকার সংরক্ষিত করেন যাতে ঐতিহাসিক সরকার বাড়ির ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারকে যেরকম সহযোগিতা করার প্রয়োজন আমরা করব।
শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাত্তার মিয়া বলেন, এ বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে বাড়িটি সংরক্ষণ করা যাবে। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বাড়িটিতে আমি গিয়েছি এবং বাড়িটির ইতিহাস আমিও জানি। শাল্লা উপজেলা জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক জায়গা। বাড়িটির পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে, বাড়িটি তারা যদি সংরক্ষণ করতে চান তাহলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব তার জন্য পরিবারের লোকেরা যদি বাড়ির কাগজপত্র সবকিছু নিয়ে আসেন তাহলে আমরাও এটি নিয়ে কাজ দ্রুতই করতে পারব।
সাহস২৪.কম/এএম.