তবেকি আমরা অধঃপতিত হচ্ছি...

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৪৫

অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, তিনি তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়েছেন। ইতিহাসের একজন কারিগরের জন্য শেখ মুজিব তনয়া এগিয়ে আসবেন সেটাইতো স্বাভাবিক, তাইনা? বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এগিয়ে না আসতেন সেটাই হত আমাদের জন্য আরো খারাপ খবর।

এই ঘটনায় যারা মোজাফফর আহমেদকে রীতিমতো 'দু'কথা' শুনিয়ে দিচ্ছেন তারা কেন দু'কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন সেটা বলবেন কি? তবে কি বিগত ২০১৫ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক গ্রহন করেননি এইকারনেই সবাই তাকে ধুয়ে দিচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউতো তাকে প্রায় 'ট্যাগ' দিয়েই ফেলেছেন।

তিনি কেন তখন পদক নেননি সেটা কি খুঁজে দেখেছেন? মোজাফফর সাহেবের বরাত দিয়ে ২০১৫ সালে ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বলেন, 'পদক দিলে বা নিলেই সম্মানিত হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি বিশ্বাসী নন। দেশপ্রেম মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। কোন পদক বা পদ পদবী তাকে কোনভাবেই উদ্বুদ্ধ করেনি। সত্যিকার অর্থে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তারা কেউই প্রাপ্তির আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি'।

'স্বাধীনতা পদক' তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন পরে আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য অর্থ নিয়েছেন। এই বিষয়ক 'বিতর্ক' নিয়ে তাকে কাঠগড়ায় উঠানো কি আমাদের অতি 'তেলবাজী' হয়ে গেলোনা?

আপনারা যারা তাকে নিয়ে 'ট্রল'করছেন, 'কুকুর কামড় দিয়েছে...তাই বলে কি কুকুরেরে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়' এমন কবিতা আওড়াচ্ছেন তারা কি একবারের জন্য এই অধ্যাপককে নিয়ে একটু ঘেটে দেখেছেন?

তিনি সেই মোজাফফর যিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মুসলিম লীগের বিপরীতে। তিনি সেই মোজাফফর যিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিরোধীতা সত্ত্বেও ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব তুলেছিলেন। তিনি সেই মোজাফফর যার বিরুদ্ধে আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে হুলিয়া জারি করে এবং তিনি প্রায় আট বছরের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য হন।

ভুলে গেলে চলবেনা তিনি উনসত্তরের গন অভ্যুত্থানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করেন। আরো শুনতে চান ইতিহাস?

যখন 'চীন-রাশিয়া' তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে এদেশের বাম রাজনীতি তীব্রভাবে দ্বিধা বিভক্ত। সেই সময় তিনি বেছে নিলেন 'সোভিয়েত' পন্থা। আওয়ামিলীগের সাথে 'চীনপন্থা'দের রিলেশনের জায়গাটা খুবই ক্ষীন কিন্তু 'সোভিয়েত পন্থার' প্রতি আওয়ামিলীগের যথেষ্ট দূর্বলতা ছিল। ইতিহাসের সাহিত্য এমনটাই আমাদের লেসন দেয়। এই 'সোভিয়েত দূর্বলতা'র কারিগর মনি সিংহ - খোকা রায়েরা যেমন মোজাফফর সাহেবরাও ঠিক তেমন।

এবার আসুন একাত্তরের ইতিহাসে, প্রবাসী সরকারের সেই উপদেষ্টাদের কথা ভুলে গেছেন? সেখানে দেখুন কার কার নাম আছে। ঐ 'উপদেষ্টা পরিষদের' একজন কিন্তু এই 'মোজাফফর' নামক মাস্টারপিস।

দেশ স্বাধীনের পরে আরো অনেক 'মজলুম' নেতার মত তিনি কিন্তু তীব্র মুজিব বিদ্বেষীতায় মেতে উঠেননি, দেশ বিরোধী 'প্রোপাগান্ডায়' মেতে ওঠেননি। এমনকি তিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিয়ন্ত্রিত 'বাকশাল' এর একজন অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন। যদিও 'বাকশাল' ইমপ্লিমেন্ট হয়নাই।

আব্দুল মতিন যিনি 'ভাষা মতিন' হিসেবে সমধিক খ্যাত। তারা একাত্তরে 'দুই কুকুরের' লড়াই বলে স্বাধীনতা যুদ্ধকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তীব্রভাবে 'মুজিব বিদ্বেষী' হিসেবে তার খ্যাতিও আছে। তার চিকিৎসার দ্বায়িত্বও আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিয়েছিলেন। কই তখনতো আমরা কোন কথা শুনিনি, কোন 'ম্যাৎকার' শুনিনি!

'তেলের রাজনীতি', 'ভাইয়ের রাজনীতি', 'পদের রাজনীতি', 'তোষামোদী রাজনীতি' করতে করতে ইতিহাস বিচ্যুত হচ্ছেন নাতো আবার? গোড়াঘাট ভুলে যাচ্ছেননাতো আবার?

খেয়াল রাইখেন ব্রো, খেয়াল রাইখেন। একজন মোজাফফর কিন্তু শুধুই একজন 'মোজাফফর' নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তার বিরুদ্ধে কথাবলার অর্থ দাঁড়ায় নিজের জন্মের বিরুদ্ধেও খানিক কথা বলা।

কমরেড মোজাফফর ওপারে ভালো থাকবেন, লাল সালাম!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ