আমাদের বাতিঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩২

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ঘর আলো করে যে শিশু জন্মেছিল তিনি যে সময়ের পরিমাপে বাঙালির মুক্তির ত্রাতা, গণতন্ত্র, দেশপ্রেমের আলোকিত বাতিঘর হয়ে উঠবেন তা বোধ হয় সৃষ্টিকর্তাই নির্ধারণ করে রেখেছিল বহুকাল আগ থেকেই।

৭৫’ এর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথচলা। তাঁর চলার পথ ছিল মসৃন ছিল না। বরং দেশি-বিদেশী শত্রুর হাতে বহু ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখার এই যাত্রায় ১৯ বার আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন যার মধ্যে সর্বশেষ ছিলো ২০০৪ এর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা।

শেখ হাসিনার ইতিহাস বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়ে ওঠার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস।

বিয়ের পর স্বামীর সংসারে গিয়ে রাজনীতিতে ছেদ। এরপর আর দশজন বাঙালি বধূর মতো স্বামী-সন্তান নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতেন জীবনের সুখময় দিন। কিন্তু একটি ঝড়, একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। ওই এক হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নেও চিড় ধরায়। পঁচাত্তরের সেই প্রতিকূল অবস্থায় ওই অদম্য নারী হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির নতুন স্বপ্নের সারথি। নিজের সাজানো-গোছানো সংসার এক পাশে রেখে ফের ফেরেন রাজনীতিতে।

প্রায় ছয় বছর প্রবাসে আটকে থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বিনির্মাণে নিজের কাঁধে তুলে নেন দায়িত্ব। সেই থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। ১৯৮১ থেকে ২০২১। পেরিয়েছে একের পর এক দশক। সংগ্রাম, ধৈর্য, ত্যাগ, পরিশ্রম—শব্দগুলো এক সুতায় গেঁথেছেন বলেই তিনিই আমাদের বাতিঘর। আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সাহসী রাজনীতিযোদ্ধা শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই করোনা ক্রান্তিকালেও দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা রয়েছে সচল। করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক যেখানে খাবি খাচ্ছেন, তাঁরা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন এই মহামারি।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনকারী শেখ হাসিনা তৎকালীন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন শেখ হাসিনা। তিনি সেখানকার ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দেশে ফিরেই তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দলকে সংগঠিত করেন। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে এরশাদের পতন হলে নতুন নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করে। এ সময় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেন শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য কুড়িয়েছেন সুনাম। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন গৌরব ও সাফল্য। রাষ্ট্র পরিচালনায় বিগত বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশের চলমান উন্নয়নের ধারার কথা তুলে ধরে রাজনৈতিক বিশ্লেকরা প্রধানমন্ত্রীকে বর্তমান বিশ্বের একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতা দিয়ে এখন বিশ্বমানের নেতার পর্যায়ে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।