নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ১০:৫৭

এস এম মুকুল
এস এম মুকুল : কৃষি বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামান্য বৃষ্টিপাত বা ঝড়ো বাতাসেও ঘটছে বজ্রপাত। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বৃক্ষহীন হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় মাঠে বা খোলা জায়গায় যেখানে উঁচু কোনো গাছ নেই বা বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেই সেখানে যারা থাকেন তারা শিকার হন। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে প্রাণহানি। বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক বা যারা খোলা মাঠে কাজ করেন। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের বজ্রপাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে। 

ফিনল্যান্ডভিত্তিক বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণাসংস্থা ভাইসালার তথ্য এটি। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে বজ্রপাতে কমবেশি ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। গত এক যুগে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। 

২০২১ সালে মারা গেছে ৩৬৩ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১৬০ মারা গেছেন। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্ব পাচ্ছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০০টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বজ্রপাতে। এই হার বিশ্বে দ্বিতীয়।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাত যেহেতু সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটি দুর্যোগ, যার হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যাপকভাবে জনগণকে সচেতন করে তোলার বিকল্প নেই। কয়েক বছর ধরে দেশে বজ্রপাতের ভয়াবহতা বিবেচনা জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করেছে বাংলাদেশ সরকার। 

বজ্রপাতকে নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন গবেষকরা। বলা হয়ে থাকে, বজ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি! তবে এটি মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ঙ্গকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর একটিও বটে। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বজ্রপাত ও প্রাণহানির সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। এই অস্বাভাবিকতার কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। কালো মেঘ সৃষ্টির পেছনে বাতাসে নাইট্রোজেন ও সালফারের পরিমাণ বাড়াকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। 

বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত প্রবণ দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডাব্লিউ স্মিডলিনের ‘রিস্কফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবিলিটি’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, ‘প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়ে থাকে। আর সংবাদমাধ্যমে বছরে মাত্র দেড়শর মতো মানুষের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হলেও, প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা পাঁচশ থেকে এক হাজার।’

নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় ভেনিজুয়েলার লেক মারাকেবিওতে। বছরে তিনশো দিন সেখানে বাজ পড়ে। প্রতি এক কিলোমিটারে বছরে ২৫০ বার বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাত নিয়ে একটা মিথ আছে যে, একই জায়গায় দ্বিতীয়বার বাজ পরেনা। যদিও  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল। 

১৯৯৭ বজ্রপাত নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই এক জায়গায় তিনবার পরস্পর বাজ পড়েছে। তবে কী কারণে একই জায়গায় বারবার বাজ পড়ে তার গবেষণায় নাসা এক নতুন তথ্য আবিস্কার করেছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ নাসার ট্রপিক্যাল রেইনফল মেজারিং মিশন ও অরবভিউ ওয়ান-মাইক্রোল্যাব স্যাটেলাইট বিভিন্ন জায়াগার বজ্রপাতের তথ্য সংগ্রহ করে। সেখান থেকে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা গেছে, বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। 

সমুদ্র থেকে স্থলভাগেই বজ্রপাত হওয়ার শঙ্কা বেশি। এর কারণ বোঝাতে গিয়ে নাসার আর্থ অবজারভেটরি ওয়েবসাইটে আরো জানানো হয়েছে, সাধারণত মাটি জলের থেকে বেশি সূর্যরশ্মি শোষণ করে। এর ফলে জলতলের তুলনায় কয়েকশ গুণ বেশি উত্তপ্ত হয় ভূত্বক। বিশাল এলাকা জুড়ে ঝড়ের সৃষ্টি হলে ফাঁকা জায়গা বা উঁচু পার্বত্য জায়গায় বজ্রপাত হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। 

তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিন প্রাইস তার ‘থান্ডারস্টর্ম, লাইটেনিং অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, ‘বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বজ্রপাত! 

ভয়ঙ্কর খবরটি হচ্ছে- প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশ মারা যায় বাংলাদেশে। দুর্যোগ বিষয়ক তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ মৃত্যুও দেশ। 

বজ্রপাতের আচরণই বলে দিচ্ছে মানবজাতির কার্যক্রমের ওপর প্রকৃতি কতটা নাখোশ। মানুষের অধিক চাহিদা আর লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের খেসারত হিসেবে প্রকৃতির প্রতিশোধ এই বজ্রপাত কিনা তা এখন গভীরভাবে ভাবতে হবে।  

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে। বজ্রপাতকে কখনোই প্রতিরোধ করা যাবে না তবে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, রাজধানীর ৯০ ভাগ ভবনে বজ্রপাত নিরোধক কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ বজ্রপাত ঝুঁকি বিবেচনা করেই জাতীয় বিল্ডিং কোডে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড বা আর্থিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, পাকা ভবনে আর্থিং ব্যবস্থা রাখা হলে বজ্রপাতে ঝুঁকি ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, যেসব ভবনে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা নেই সেসব ভবনে বজ্রপাতের সময় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। 

এ সময় ল্যান্ড ফোনের ব্যবহার থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে হবে। প্রয়োজনে ল্যান্ড ফোন বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। সম্প্রতি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্বাত্তিক পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেছেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত উগান্ডায় হলেও জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে বাংলাদেশে এ ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাওহিদা রশিদ বলছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক আছে। আবার জাইকার কান্ট্রি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নাওকি মাতসুমুরা নিজ দেশে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, জাপানে আগে বজ্রপাতে প্রতিবছর ৩০ জনের বেশি মারা যেত। এখন সচেতনতা গড়ে তোলায় বছরে দুই জনের বেশি মানুষ মারা যায় না। 

তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাপানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে স্থানে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে ১০ মিনিট আগে তার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্কুলের পাঠ্য বইয়ে এ বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করে বাচ্চাদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, জাপানে এখনো প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি বজ্রপাত হয়। অথচ মৃত্যুর ঘটনা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। 

বজ্রপাতের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- দেশের অধিকাংশ এলাকায় মুঠোফোন ও বৈদ্যুতিক টাওয়ার রয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। সন্ধ্যার পর মানুষের ঘরের বাইরে অবস্থান বাড়ছে। বেশির ভাগ বজ্রপাতই হয় সন্ধ্যার দিকে। 

নদীর নব্য বিনষ্ট, জলাভূমি ভরাট, গাছ, বন-জঙ্গল ধ্বংস হওয়ায় দেশের তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এই সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের গড় হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২০০ থেকে ৪০০টি মৃত্যু ঘটছে বজ্রপাতে। 

বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে বজ্রপাত।

বিশ্লেষকদের মতে, শহরের ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু তেমন হয় না। কিন্তু গ্রামে তা না থাকা ও বড় গাছপালা কমে গিয়ে খোলা মাঠের কারণে সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাদের কথা দেশের হাওড় এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ সেখানকার বেশিরভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ নেই।

এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। এ সময়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারের ৪০টির বেশি বজ্রপাত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্প্রতি কয়েক বছরে যে হারে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাংলাদেশ বজ্রপাত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। 

গবেষণা তথ্য মতে, সাম্প্রতিকালে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বায়ু দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে  দেখা গেছে গত ১০ বছরের বাংলাদেশে মারা গেছে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ। বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। 

দুঃখজনক সত্যটি হলো, বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় বড় গবেষণা চলছে। 

বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। যদিও বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাও খুবই কঠিন। তবে সতর্ক হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যেতে পারে। একসময় দেশের বেশিরভাগ গ্রাম এলাকায় বড় গাছ থাকত। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। মনে রাখতে হবে আমরা বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। 

বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। বজ্রপাতের শঙ্কা আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউকাস্টনিং’ পদ্ধতিতে রেডিও, টিভি মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে। 

জানা গেছে- বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়া অফিসগুলোর মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তির রাডার ও ডফলার রাডার রয়েছে। বজ্রমেঘ তৈরির ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে দিক ও সম্ভাব্য স্থান শনাক্ত করে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। তৎক্ষণাৎ সতর্কবানী প্রচার করতে হবে। বজ্রপাতের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনতে, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে পাঠদান জরুরি।  

আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। গুর গুর মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ বন্ধ রাখুন এবং দরজা-জানালা ভালমতো বন্ধ রাখতে হবে। গাড়ির ভেতরও আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। 

পানির সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে হবে। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে অবস্থান করুন। বজ্রপাতের সময়ে আংটি, চাবি, কাস্তে, কোদাল, মোবাইল ইত্যাদি কমপক্ষে ৬০ ফুট দূরে রাখতে হবে। মাটির সঙ্গে সংযুক্ত ধাতব পদার্থে হাত বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। 

এস এম মুকুল : কৃষি বিশ্লেষক ও কলাম লেখক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ