পেনাল্টি মিস করায় সম্মানিত হয়েছেন খেলোয়াড় (ভিডিও)

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৮, ১৫:৫৫

অনলাইন ডেস্ক

২০০৩ সালের কথা। হংকংয়ে চারদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল ফিফা। এতে অংশগ্রহণ করেছিল ইরান, ডেনকার্ম, উরুগুয়ে এবং স্বাগতিক হংকং।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে হংকং স্টেডিয়ামে চলছিল ইরান বনাম ডেনমার্কের ফুটবল ম্যাচ। ইতিমধ্যে ইরান ১-০ তে এগিয়ে আছে। ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ খেলা হচ্ছিল। যে দল জিতবে ফাইনালের টিকিট তার।

ম্যাচের ৪৫ মিনিটের পরও প্রথমার্ধ বিরতি না দিয়ে রেফারি ৩ মিনিট ইনজুরি টাইম দেন। সেই ইনজুরি টাইমে ঘটে ঘটনা। এ সময়ে বল ছিল ইরানের ডি-বক্সে। বাঁশির আওয়াজ শুনে ইরানের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় প্রথমার্ধের বিরতি মনে করে নিজেদের গোলরক্ষকের দেয়া পাস থেকে বল হাতে তুলে নেয়। অমনি রেফারির ঠোঁট গলে বেরিয়ে আসে আরেকটি বাঁশির শব্দ। হ্যান্ডবল বিধান অনুযায়ী পেনাল্টি পেয়ে যায় ডেনমার্ক। 

গোলরক্ষকসহ হতভম্ব ইরানশিবির। তাদের প্রশ্ন হাফটাইমের বাঁশি বাজাল কে?

প্রথম বাঁশির আওয়াজ সবাই শুনেছে। কিন্তু সে বাঁশিতে ফুঁ দেননি রেফারি। সবাই বুঝতে পারেন যে, গ্যালারি থেকে দর্শকদের কারও কর্ম এটি। ইরানের খেলোয়ারটি এ বাঁশি শুনেই ভেবেছিলেন রেফারি প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার বাঁশি দিয়েছেন। তাই সে বলটি হাতে তুলে নেয় এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটনাটি ঘটেছে ইরানেরই ডি বক্সের ভেতরে।

এদিকে ফুটবলের নিয়ম ভাঙতে অনড় রেফারি। ইরানের কোনো দোষ ছাড়াই রেফারি ডেনমার্ককে পেনাল্টি শুটের নির্দেশ দেন। শুরু হয় মাঠেই আলোচনা। দু’দলের কোচও শামিল হন এ ঘটনার সুরাহা করতে।

কিন্তু রেফারি নিয়মানুযায়ী চলবে। ডি বক্সের ভেতরে হাত দিয়ে বল ধরায় মাসুল গুনতেই হবে ইরানকে। অগত্যা কোনো উপায় না দেখে ডেনমার্ক দলের অধিনায়ক মরটেন উইঘোরস্ট তার কোচের সঙ্গে পরামর্শ করে পেনাল্টি নিতে আসেন। বলে পা ছোঁয়ান এবং ঘটে যায় ঐতিহাসিক এক পেনাল্টি কিক। ডেনমার্কের সেই খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে পেনাল্টিটি মিস করেন।

বল কে গোলবার থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেন। অথচ সেই ম্যাচে ডেনমার্ক ১-০ গোলে হেরে যায় ইরানের কাছে। ভাবছেন সুযোগ পেয়েও হার না এড়ানো এমন পেনাল্টি কিক করায় হয়তো ডেনমার্ক দলের অধিনায়ককে তুলাধোনা করা হয়েছিল। কিন্তু না, হয়েছে তার উল্টো।

ইতিহাসে জায়গা করে নেয় সেই পেনাল্টি। পরে ডেনমার্কের সেই খেলোয়াড়কে অলিম্পিক ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড দেয় সেই পেনাল্টি মিসের জন্য! সেই ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানায় ফুটবলবিশ্ব। এটিই ফুটবল।

ফুটবল শুধু হার-জিতের ব্যাপার নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। মাঠে ২২ জন বল নিয়ে কাড়াকাড়ি করলেও ফুটবল দুটি দেশের মধ্যে ভাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে দেয়। আত্মার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে মাত্র ৯০ মিনিটের সাধনায়।

তাই দলমত নির্বিশেষে ফুটবল আমাদের জানায়, ‘এটি ঘৃণা, রেষারেষি বা অপরকে ছোট করার কোনো বিষয় নয়। ফুটবল আনন্দের, ফুটবল এ বাসযোগ্য সবুজ গ্রহের বিভিন্ন জাতির মিলনমেলার একটি উপলক্ষ। এটিই ফুটবলের দর্শন।’

সাহস২৪.কম/খান/মশিউর