পেপ গার্দিওলা বনাম ওলে গানার সুলশার

ম্যানসিটির দৌরাত্ম্য থামিয়ে দিল ম্যানইউ

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২১, ১৬:০৫

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ডার্বি ম্যাচে সিটির মাঠ ইতিহাত স্টেডিয়ামে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে সহজ জয় পেয়েছে ওলে গানার সুলশারের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই নিয়ে সিটির মাঠে টানা তিন লিগ ম্যাচ জিতল সুলশারের দল। যে কীর্তি এর আগে শুধুই ছিল সুলশারের গুরু স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিটির মাঠে গিয়ে টানা চার লিগ ম্যাচ জিতে এসেছিলেন ফার্গুসন। এই জয়ে ঘরের বাইরে টানা ২২ লিগ ম্যাচে অপরাজিত থাকল ইউনাইটেড, যার মধ্যে ১৪ ম্যাচেই জিতেছে তারা। অর্থাৎ শুধু সিটির মাঠ বলেই নয়, ঘরের বাইরে বেরোলেই ভেলকি দেখাচ্ছে ওলে গানার সুলশারের দল।

এদিকে ঘরের মাঠে সুলশারের সংঙ্গে পেরে উঠলো না গার্দিওলা। ডার্বি ম্যাচটি হেরেই গেল। তবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২৮ ম্যাচ জেতার পর এই প্রথম কোনো ম্যাচ হারল ম্যানচেস্টার সিটি। টটেনহামের বিপক্ষে গত নভেম্বরে ২-০ গোলে হারার পর একটা ম্যাচেও হারেনি এত দিন সিটি। শীর্ষ পর্যায়ে পেপ গার্দিওলা যেসব ম্যানেজারের বিপক্ষে অন্তত তিনবার লড়েছেন, একমাত্র ওলে গানার সুলশারই হারের চেয়ে জিতেছেন বেশি। গার্দিওলার বিপক্ষে সুলশার জিতেছেন চারবার, হেরেছেন তিনবার। তবে ম্যাচ হারলেও সিটির নজর শিরোপার দিকেই। দ্বিতীয়তে থাকা ম্যানইউর থেকে ১১ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষেই আছে সিটিজেনরা।

রবিবার (৭ মার্চ) ইতিহাত স্টেডিয়ামে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়তে উঠে এসেছে ওলে গানার সুলশারের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সিটিকে হারানোর পথে গোল করেছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস ও লুক শ।

এদিন ম্যাচের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সিটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসের ভুলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইউনাইটেড। নিজেদের বক্সে ইউনাইটেডের অ্যান্থনি মার্শালকে ফাউল করে বসেন জেসুস। সেখান থেকে স্পট কিকে গোল করেন ইউনাইটেডের পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেস। প্রথমার্ধে এই গোলটি আর শোধ করতে পারেনি গার্দিওলার দল।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসেই সিটিকে সমতায় ফেরানোর প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন রদ্রি। কিন্তু তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট করেননি লুক শ। ম্যাচের ৫০ মিনিটে ইউনাইটেডের হয়ে আরেকটি গোল করেন লুক শ। রাশফোর্ডের নিচু শটে সিটির গোলরক্ষক এদারসনকে পরাস্ত করে গোলটি করেন তিনি। তার এই গোলটি ইউনাইটেডের অগ্রাগামিতাকেই ধরে রেখেছে আরও। অথচ এই লুক শ খেলতে পারেন কি না, সেটা নিয়েই সন্দেহ ছিল ইউনাইটেড শিবিরে। এদিকে লুক শকে গোল করিয়েছেন রাশফোর্ড, এই নিয়ে চলতি মৌসুমে তার দশটি অ্যাসিস্ট হয়ে গেল। ক্যারিয়ারে এক মৌসুমে এত বেশি অ্যাসিস্ট আর কখনো করেননি এই ইংলিশ স্ট্রাইকার।

নিজেদের মাঠে একটি গোলও শোধ করতে পারেনি পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। অবশেষে এই ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওলে গানার সুলশারের দল।

গত ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরু থেকে গার্দিওলার দল যে পাঁচবার ঘরের মাঠে হেরেছে, এর মধ্যে তিনটি হারই এসেছে ইউনাইটেডের বিপক্ষে। প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল—এমন সব শেষ ১০৩ ম্যাচে ইউনাইটেড কখনো হারেনি। এর মধ্যে জিতেছে ৯১ ম্যাচে, ড্র করেছে বাকি ১২ ম্যাচে।

ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে কোচ সুলশার বলেছেন, ‘আমি অনেক খুশি। প্রথম ১০ থেকে ১৫ মিনিটে আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময় ফলাফলটা ধরে রাখার জন্য খেলছিলাম। দ্বিতীয় গোলটা অসাধারণ ছিল। লুক শ দেখিয়েছে ও কেমন খেলোয়াড়। ও খেলতে পারবে কি না, সেটা নিয়েই আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। ওকে শেষ মুহূর্তে ফিটনেস পরীক্ষায় পাস করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। কী দুর্দান্তই না খেলল সে!’

পেপ গার্দিওলা এবং ওলে গানার সুলশার

এদিকে ইউনাইটেডকে অভিনন্দন জানিয়ে গার্দিওলা বলেছেন, ‘প্রথমেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে অভিনন্দন। আর দশটা ম্যাচ বাকি আছে লিগে। মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করেছি আমরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বাকি যে কয়টা ম্যাচ জেতা সম্ভব আমরা জিতব।’

ম্যানইউর বিপক্ষে এই হারটি নিয়েও ২৮ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই আছে ম্যানচেস্টার সিটি। সমান ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে অর্থাৎ ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে টেবিলের দ্বিতীয়তে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সমান ম্যাচে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়তে আছে লেস্টার সিটি। এক ম্যাচ কম খেলে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে আছে চেলসি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত