ওয়ানডে সিরিজ

সমতায় ফিরল দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২২, ২১:৩৯

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে জায়গা বানিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে নিজের প্রথম চারটি মারলেন রাসি ফন ডার ডুসেন। এতে জয় নিশ্চিত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। রবিবার (২০ মার্চ) জোহানেসবার্গে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৬ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজে সমতায় ফিরল স্বাগতিকরা।

টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে কাগিসো রাবাদার বোলিং তোপে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

এদিন দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা কুইন্টন ডি ককের ঝোড়ো ব্যাটিং ও কেল ভেরেইনার অর্ধশতকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ইয়ানেমান ম্যালানের সঙ্গে ডি ককের ৭৫ বলে ৮৬ রানের জুটিতে অনেকটাই এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপরই ফিরতি ক্যাচে মালানকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার আগে ৪০ বলে ৪ চারে ২৬ রান করেন মালান।

পরে ভেরেইনাকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকে ডি কক। ফিফটি করেন তিনি। আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ডি কককে ফেরান সাকিব। ফেরার আগে ৪১ বলে ৯ চার ২ ছক্কায় ৬২ রান করেন কুইনটন ডি কক। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে ৮২ রানের একটি জুটি গড়েন ভেরেইনা। এই জুটিতেই দলকে সহজ জয়ের পথে নিয়ে যায়। শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে অধিনায়ক বাভুমাকে ফেরান আফিফ হোসেন। ফেরার আগে ৫২ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ রান করেন বাভুমা।

শেষে মাহমুদউল্লাহর বলে চার মেরে দলকে জয় এনে দেন ভান ডার ডুসেন। এর আগেই ফিফটি করে ফেলেন ভেরেইনা। ৭৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রান ভেরেইনার এবং ৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ডুসেন।

বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী, সাকিব ও আফিফ উইকেট তিনটি নেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই যাওয়া আসার মধ্যে ছিল তামিম-লিটনরা। মেডেল অডারে গিয়ে ম্যাচের হাল ধরেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮৬ রানের একটি জুটি গড়ে বাংলাদেশকে মোটামুটি একটা স্কোর এনে দেন তারা। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৬ রানের জুটিটি অনাকাঙ্ক্ষিত আরেকটি রেকর্ড এনে দিয়েছে। এরপর ৩ বলের ব্যবধানে আফিফ-মিরাজকে হারালে আবারও বিপদে পরে বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ১৪ রান পেয়েছে তামিমের দল।

৪৬তম ওভারে রাবাদার তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিলেন। ৩০ গজের মধ্যে বাভুমার হাতে ধরা পরেন তিনি। ফেরার আগে ১০৭ বলে ৯ চারে ৭২ রান করেন আফিফ হোসেন। রাবাদার এই ওভারের শেষ বলেই ফেরেন মিরাজ। ফেরার আগে ৪৯ বলে ১ চার ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেন তিনি। আফিফ-মিরাজ যখন আউট হলেন তখন বাংলাদেশের ৪৬ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান।

এদিকে ওই ওভারে আফিফ-মিরাজের উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নিলো রাবাদা।

৪৯তম ওভারটি করতে আসেন রাসি ফন ডার ডুসেন। বোলার সংকটের কারণে তাকে আনা হয়। পারনেল চোট পাওয়ায় বল করছিলেন বাভুমা। পরে বাভুমাও চোট পাওয়ায় ডুসেনকে ৪৯তম ওভারটি করতে দেওয়া হয়। বলে এসেই দ্বিতীয় বলে উইকেট নেন ডুসেন। তার দ্বিতীয় বলটিতে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অন সীমানায় ধরা পড়েন শরিফুল। ৮ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ তখন ১৮৮/৯।

এরপর শেষ ওভারে বাংলাদেশ পেলো ৪ রান। ৯ উইকেট হারিয়ে মোট ১৯৪ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এই রানকেই অনেক বলে মনে হতে পারে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৬০ ও মিরাজের সঙ্গে ৮৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন আফিফ।

এর আগে প্রথম ওভারেই তামিমকে দুবার অস্বস্তিতে ফেলেছেন এনগিডি। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই আঘাত। তৃতীয় ওভারে এনগিডির দ্বিতীয় বলটির বাড়তি বাউন্সই লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে গ্লাভসের ছোঁয়া নিয়ে আকাশে উঠে যায়। পয়েন্টের ফিল্ডারের হাতে ধরা পরেন ১ রান করা অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

এরপর রাবাদার বাড়তি বাউন্স অস্বস্তিতে ফেলেছিল সাকিবকে। রাবাদার বলের বাড়তি বাউন্স, লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কোণায় লেগে বল আকাশে উঠে যায়। শূন্য রানে বিদায় সাকিব। এরপর ৮ ওভারের প্রথম বলে বিদায় নিলেন লিটন দাস। রাবাদার শর্ট বল প্রথমে খেলার চেষ্টা করেছেন লিটন। জায়গা একদম কমে যাওয়ায় পরে বল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। কিন্তু ব্যাটে আলতো স্পর্শ করে ডি ককের গ্লাভস গিয়ে জমে বল। এতে ২১ বলে ১৫ রান করে ফেরেন লিটন। এরপর ২ রানে ফেরেন ইয়াসির আলী। ১২তম ওভারে রাবাদার শেষ বলটির দুর্দান্ত এক বাউন্স ইয়াসিরের গ্লাভসে লেগে ক্যাচ উঠে মহারাজার হাতে। এর পরের ওভারে ফেরেন মুশফিক। ওয়েইন পারনেলের বল লেগ স্টাম্পে পিচ করে সোজা মুশফিকের প্যাডে। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মুশি। ফেরার আগে ১১ রান করে এই উইকেটররক্ষ-ব্যাটার। বাংলাদেশের তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান। সেখান থেকে হাল ধরেন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদা ৫টি, এনগিডি, পার্নেল, শামসি ও ভেন ডার ডুসেন ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছন কাগিসো রাবাদা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত