প্রথম টেস্ট: দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ

জয়ের সেঞ্চুরি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটা উদাহরণ

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১৫:০০

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে রেকর্ডভাঙ্গা একটি সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। এই টেস্টে ফলাফল যাই হোক না কেন জয়ের সেঞ্চুরি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটা উদাহরণ - বলছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।

ডারবানে নিজের প্রথম ইনিংসেই ১৩৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু রেকর্ডের খাতায় শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে না, এশিয়ার প্রেক্ষিতেই মাহমুদুল হাসান জয়ের ইনিংসটি বিশেষ।

সাকিব-মুশফিক-তামিমের পর লিটন-মিরাজ-মুস্তাফিজ এবার শরিফুল-জয়দের ব্যাচও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়মিত হয়ে উঠছেন, এরা সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নজর কেড়েই তারা জাতীয় দলে পা দিয়েছেন, জয় আর শরিফুল ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য। সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আবারও বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে শতক হাঁকালেন জয়।

মাহমুদুল হাসান জয় চাঁদপুরের ছেলে। ২০১৩ সালে চাঁদপুরে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন তিনি।

এমনিই দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন বলেই বিবেচিত, সচিন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, স্টিফেন ফ্লেমিং, শিবনারায়ণ চন্দরপলের মতো ব্যাটসম্যানরা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সফল বলে বিবেচ্য।

এশিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাচিন, ভিরাট কোহলি, রাহুল দ্রাবিড়, কুমার সাঙ্গাকারা, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো ব্যাটসম্যানরা সফল হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। সেখানে নিজের প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকানোর পর জয় বলেন, শুধুই উইকেটে থাকাই ছিল লক্ষ্য।

জয় বলেন, আমার দল চেয়েছে যাতে আমি ভালো কিছু করি সেটাই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

দিনশেষে উপস্থিত বাংলাদেশি গণমাধ্যমের কাছে জয় বলেছেন, এখানে কোনও ম্যাজিক নেই, আমার দায়িত্ব ছিল ব্যাট করা, সেই করেছি।

দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে শুধু না, টেস্ট ক্রিকেটের ধরনই এটা - উইকেটে থাকলে রান আসবেই, বলছেন জয়।

৪৪২ মিনিট ব্যাট করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়, খেলেছেন ৩৩৬ বল। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স এই ইনিংস দেখে বলেছেন, টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এমন ইনিংস তিনি খুব কমই দেখেছেন।

দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে সিডন্স বলেন, জয়ের ইনিংসটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই বিশেষ কিছু।

জয়ের ইনিংসটাকে ধৈর্য্য আর পরিকল্পনার মিশেল হিসেবে বর্ণনা করে সিডন্স বলেন, যতটা জানে ঠিক ততটাই খেলেছে জয়। এখানে বাড়তি কোনো আতিশয্য ছিল না তার ইনিংসে। টেস্ট ক্রিকেটে যেভাবে সে ব্যাট করেছে, আমরা গর্বিত। টেস্টে এতো সুন্দর ইনিংস বাংলাদেশের খুব বেশি আছে কি না। আমি নিশ্চিত নই।

বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩০০ বল তো দূরে থাক ২০০ বলও খেলেনি এর আগে।

এছাড়াও জয় তিন ফরম্যাটেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। ২০২০ সালে যেবার বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জয় পায় বাংলাদেশ, তাতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন জয়। ৬ ম্যাচে ১৮৪ রান তোলেন, ৮৪ গড়ে। এসময় একটি শতকও হাঁকিয়েছিলেন তিনি।

চলতি বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি আসরের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাহমুদুল হাসান জয়। ১১টি ম্যাচ খেলে তিনি ২৩৫ রান তোলেন, একটি অর্ধশতকও হাঁকান তিনি।

গত বছরেই জয় টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন। ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ফরম্যাটে সুযোগ পেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যান তিনি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচে জেতে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জয় প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের একটি ইনিংস খেলেন। আর এবারে নিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেললেন ১৩৭ রানের একটি ইনিংস।

দশটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন জয়, সেখানে মূল যে বিষয় লক্ষ্য করা গেছে সেটি হলো তার একাগ্রতা। চুয়ান্ন স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি। মূলত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সমস্যার একটা বড় জায়গা হচ্ছে ধৈর্য্য সেখানে ২১ বছর বয়সী জয়কে এখনও পর্যন্ত 'পাশ মার্ক' দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত