উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

৭ গোলের ম্যাচে ম্যানসিটির জয়

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১৭:০৪

সাহস ডেস্ক

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ৯০ মিনিটের টানটান উত্তেজনার এক সিনেমাই যেন মঞ্চস্থ হলো। যার মূল চরিত্রে ছিলেন থেকে শুরু করে কেভিন ডে ব্রুইনা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, বের্নার্দো সিলভা, ফিল ফোডেন, করিম বেনজেমা, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র- প্রত্যেকে! দুই দল মিলিয়ে হলো ৭টি গোল। এই সাত গোলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে জয় তুলে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

তবে এদিন ব্যবধান আরও বাড়িয়ে জিততে পারতো সিটি। একের পর এক মিসের মহড়ায় শেষ পর্যন্ত নুন্যতম ব্যবধানে জিততে হয় তাদের। সিটি জিতলেও বেনজেমার জোড়া গোলে অস্বস্তিতে নেই রিয়াল। এর আগে শেষ ষোলোতে পিএসজির বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও হ্যাটট্রিক করে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন বেনজেমা। পরে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচেও এক পর্যায় এক গোলে পিছিয়ে থেকেও ওই বেনজেমার জোড়া গোলেই লড়াইয়ে টিকে থাকে দল।

এরপর সেমিফাইনালে দেখা হয় ইংলিশদের শক্তিশালি দল ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে। কিন্তু প্রথম লেগের ম্যাচের প্রথম ১১ মিনিটেই দুই গোলে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই কেভিন ডি ব্রুইনার গোলে এগিয়ে যায় সিটি। রুবেন দিয়াসের কাছ থেকে বল পেয়ে একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নিখুঁত এক ক্রস করেন আলজেরিয়ান তারকা রিয়াদ মাহারেজ। তার ক্রসে দারুণ হেডে বল জালে জড়ান ডি ব্রুইনা।

তার নয় মিনিট পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গেব্রিয়েল জেসুস। ম্যাচের ১১তম মিনিটে বাঁ প্রান্তে ফিল ফোডেনের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে নিখুঁত এক ক্রস দেন ডি ব্রুইনা। অসাধারণ দক্ষতায় রিয়াল ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবাকে বোকা বানিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ এক প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান ব্রাজিয়ালিয়ান এ ফরোয়ার্ড।

করিম বেনজেমা

পরে ম্যাচের ৩৩ মিনিটেই ব্যবধান কমান করিম বেনজেমা। বাঁ প্রান্ত থেকে ফেরলান্দ মেন্দির ক্রসে দুর্দান্ত এক সাইড ভলিতে বল জালে জড়ান ফরাসি এ ফরোয়ার্ড। চলতি আসরে এটা তার ১৩তম গোল। পরে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে এই ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ম্যানচেস্টার সিটি।

তবে বিরতি থেকে ফিরে এসে আবারও ব্যবধান বাড়ায় সিটি। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ডান প্রান্তে ভিনিসিয়ুস বল হারালে তা কেড়ে নিয়ে ফের্নান্দিনহো এগিয়ে দারুণ এক ক্রস করেন ডি-বক্সে। লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ফিল ফোডেন। তার দুই মিনিট পরেই আবারও ব্যবধান কমায় রিয়াল। ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে ফের্নান্দিনহোকে সেই ভিনিসিয়ুস বোকা বানিয়ে ফাঁকায় বল নিয়ে এগিয়ে দুরন্ত গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ান। এতে ৩-২ গোলে পিছিয়ে থাকে রিয়াল।

ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে আবারও এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ডি বক্সের সামনে জিনচেঙ্কো রিয়ালের এক খেলোয়াড়ের বাধার মুখে বল হারালে পেয়ে যান বের্নার্দো সিলভা। আলগা বল ধরে দূরপাল্লার অসাধারণ এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন পর্তুগিজ এ তারকা। তার আট মিনিট পর স্পটকিক থেকে ব্যবধান আবারও কমান বেনজেমা। ডি-বক্সের মধ্যে আইমেরিক লাপোর্তার হাতে বল লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ম্যাচের ৮২তম মিনিটে অসাধারণ এক পানেনকা শটে বল জালে জড়িয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন বেনজেমা। চলতি আসরে এটা তার ১৪তম গোল। পরে ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে প্রথম লেগে এই ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যানসিটি। তবে দ্বিতীয় লেগ যেহেতু রিয়ালের মাঠে, তাই এ ম্যাচে এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও খুব একটা অস্বস্তিতে থাকবে না রিয়াল মাদ্রিদ।

এদিন পুরো ম্যাচে দারুণ খেললেও মাহরেজের জন্য জয়ের ব্যবধানটা বড় করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ২৬তম মিনিটে তো অবিশ্বাস্য এক মিস করেন। ফাঁকায় বল পেয়েও সাইডের পোস্ট কাঁপান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফাঁকায় পেয়েও নিজে শট না নিয়ে পাস দিতে গিয়ে নষ্ট করেন সুবর্ণ এক সুযোগ। বিরতির পরপরই একেবারে ফাঁকায় থেকে বল লাগান সাইডপোস্টে। ৭৬তম মিনিটে ফের গোলরক্ষককে একা পেয়ে বাইরে মারেন তিনি। অবশ্য দায় রয়েছে ফোডেনেরও। ২৯তম মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়েও বাইরে মারেন এ তরুণ। সুযোগ নষ্ট করেন আরও দুটি। ৪৭তম মিনিটে গোলমুখে আলগা বল পেয়ে মারেন দানি কার্ভাহাল বরাবর। ৬৮তম মিনিটেও বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে পারেননি। ম্যাচের শেষ দিকে মাহরেজের দুটি দারুণ থ্রু পাস থেকে দুইবারই অল্পের জন্য পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন দিয়াস। অন্যথায় ব্যবধান বাড়তেও পারতো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত