ওয়ানডে সিরিজ

চার ফিফটিতে বাংলাদেশের তিনশ পার

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৭:২৬ | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৯:৩২

অনলাইন ডেস্ক

 

দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ফিফটিতে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে বাংলাদেশ। জোড়া ফিফটি করে সে ভিত আরও মজবুত করেন এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিম। তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরে অর্ধশতক তুলে নেন বিজয়। আর মুশফিকও অর্ধশতক তুলে নেন এক সিরিজ পর বিশ্রাম থেকে ফেরাই। এই চার ফিফটিতেই তিনশ পার করে জিম্বাবুয়েকে বড় লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) হারারের স্পোর্টস পার্কে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টসে হেরে আগে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে চার ফিফটি নিয়ে ৩০৩ রান করেছে টাইগাররা। পুঁজিটা অবশ্য আরও বড় হতে পারতো। শেষ তিন ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে স্বাগতিকরা। এ সময়ে বাউন্ডারি আসে মাত্র দুইটি। শেষ ২২ বলে মাত্র ২৪ রান করতে সমর্থ হয় টাইগাররা। অথচ উইকেট তখনও ছিল ৮টি। উইকেটে ছিলেন সেট ব্যাটার মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। তবে শেষ ১০ ওভারে আসে ৯০ রান।

এদিন ওপেনিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস শুরুটা করেছিলেন সতর্কভাবেই। জিম্বাবুইয়ান দুই পেসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন দুই ওপেনারকে। তবে উইকেট হারাননি তামিম-লিটনরা। দুজনে করে ফেলেন সপ্তম ৫০ রানের জুটি। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ ওপেনারদের মধ্যে এর চেয়ে বেশি ৫০ রানের জুটি আছে দুটি। দুটিতেই আছেন তামিম, ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারের সঙ্গে তার ৫০ রানের জুটির সংখ্যা ১১টি করে।

এরপরই ফিফটি করেন তামিম ইকবার। এটি তার ৫৪তম ফিফটি। ৪৮ রানে দাঁড়িয়ে ৯টি ডট বল খেলেছেন তামিম। ২২তম ওভারে প্রথমবারের মতো আসা সিকান্দার রাজার বলে সিঙ্গেল নিয়ে সে খরা কাটান তিনি। পরের ওভারে মিল্টন শুম্বাকে স্কুপ করে ডাবলস নিয়ে ক্যারিয়ারের ৫৪তম অর্ধশতক পেয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাইলফলকে যেতে তার লাগল ৭৯ বল।

২৪তম ওভারে ১০০ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ, কোন উইকেট না হারিয়ে। তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ রান ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এ নিয়ে চতুর্থবার ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি গড়লেন এ দুজন। বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি চারটি শতরানের জুটিতে তামিম-সৌম্য সরকারের জুটিকে ছুঁয়ে ফেলেন তারা। ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটি সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের।

পরের ওভারে আরেকটি মাইলফলকও স্পর্শ করেন তামিম। ২৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে ৪ রান যোগ করেই বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে এ কীর্তি গড়া ৩৩তম ব্যাটসম্যান তিনি। ওপেনার হিসেবে নবম। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলার পথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর ৫ হাজার, ৬ হাজার, ৭ হাজারের পর ৮ হাজার রানের রেকর্ডেও প্রথম বাংলাদেশি হলেন তিনি।

এরপরই ফিরলেন এই ওপেনার। ফিফটি ও ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান করে সিকান্দার রাজার ওপর চড়াও হতে গিয়ে ফিরলেন তিনি। শর্ট লেংথের বল তুলে মারতে গিয়ে টপ-এজড হন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ধরা পড়েছেন ইনোসেন্ট কাইয়ার হাতে। ফেরার আগে ৮৮ বলে ৯ চারে ৬২ রান করেন দেশ সেরা এ ওপেনার। বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারিয়েছে ১১৯ রানে। তামিম ফেরার পর নামেন এনামুল হক বিজয়। এই ম্যাচ দিয়েই তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফেরেন তিনি।

এরপর লিটনের ৫০। ৭৪ বলে ৪৯ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন লিটন। ৩০তম ওভারে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আসে বলে। সে ওভার শেষে লিটনের রান ৭৯ বলে ৬২। ওই ওভারের প্রথম বলে চার মেরে ফিফটি পূরণ করেন লিটন। এটি তার ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি। প্রথম ৪ বলের মধ্যে ৩টি চার মেরেছেন লিটন-মিডউইকেট দিয়ে দুটি, পয়েন্ট দিয়ে একটি। গতি বেড়েছে এরপরই, পরের ওভারে এনগারাভাকে পুল করে মেরেছেন আরেকটি চার। পরের ১৪ বলে লিটন করেছেন ৩১ রান। সর্বশেষ নিয়াউচির বলে ক্ল্যাসিক শটে লং অফ দিয়ে মেরেছেন ইনিংসের প্রথম ছক্কা। ছক্কার পর লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে আরেকটি চার। পরের ওভারে সিকান্দার রাজার বলে সিঙ্গেল নেওয়ার পরই হ্যামস্ট্রিং চেপে ধরে শুয়ে পড়েছেন লিটন। ৩৩.১ ওভারে ১ উইকেটে ১৭১ রান বাংলাদেশ, ইনিংসে দ্বিতীয় পানি পানের বিরতি ডেকেছেন আম্পায়াররা।

এরপর ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে দ্রুত ছুটেছিলেন লিটন। ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই ব্যথা অনুভব করেন। শেষ দিকে খোঁড়াতে থাকেন। পরে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ফেরার আগে ৮৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন লিটন দাস। ৭টি অর্ধশতকের পাশাপাশি ৫টি শতক আছে তার। এর আগে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল।

লিটন ফেরার আগে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন। পরে এনামুলের সঙ্গী হতে নামেন মুশফিকুর রহিম। ৪০ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান বাংলাদেশের। ওভারপ্রতি তখন পর্যন্ত উঠেছে ৫.৩৩ করে রান। অর্ধশতকের পথেই এগোচ্ছিলেন এনামুল, শুরুটা ভালো পেয়েছিলেন মুশফিকও। এ দুই ব্যাটার রানের গতি বাড়াতে থাকেন দ্রুত গতিতেই। এর সুবাধে ফিফটি করেন এনামুল। মিল্টন শুম্বাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে দারুণ শটে ছক্কা মেরে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এ ডানহাতি। দীর্ঘদিন পর প্রিয় সংস্করণে ফিরেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগালেন। ৪৮ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পেলেন তিনি।

দীর্ঘদিন দলের বাহিরে থাকা এনামুলকে প্রথম খেলানো হয়েছিল টেস্ট। এরপর টি-টোয়েন্টি। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যে সংস্করণে রেকর্ডগড়া মৌসুম কাটিয়ে এসেছেন এনামুল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সে সংস্করণে সুযোগ পাননি তিনি। তবে হারারেতে পেলেন। তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে ফিফটি করলেন এনামুল। ফিফটি করেই আগ্রাসী ব্যাট চালাতে থাকেন তিনি। তবে ৪৬তম ওভারে চাপ তৈরি করছিলেন ভিক্টর নিয়াউচি। প্রথম ৪ বলে দিয়েছিলেন ৩ রান। এরপর স্লটে পেয়ে তুলে মারতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি এনামুল। লংঅনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন। ৬২ বলে ৬ চার ৩ ছক্কায় ৭৩ রান করে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস খেলে ফিরলেন এনামুল। তিনি ব্যাটিং করেছেন ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে। ক্যারিয়ারে অর্ধশতক পেরিয়েছেন, এমন ইনিংসগুলোতে এটিই সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তার। এর আগে কখনোই ৫০-পেরোনো ইনিংসে ১০০ বা এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেননি তিনি। সর্বোচ্চ ছিল ৮২.৭৫, ২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৫ বল খেলে করেছিলেন ১২০ রান।

এনামুলের বিদায়ের পর মাঠে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তখন বাংলাদেশের ৪৫.৫ ওভারে ২৬৭ রান ২ উইকেট হারিয়ে। নিজের প্রথম দুই বলেই দুটি বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর মেরেছেন আরও একটি। অপর প্রান্তে মুশফিকও চেষ্টা করেন রানের গতি বাড়াতে। তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রানের জুটি গড়েন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। পরে নির্ধারিত ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩০৩ রান। ৪৯ বলে ৫ চারে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। আর ১২ বলে ৩ চারে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

স্বাগতিকদের হয়ে সিকান্দার রাজা ও ভিক্টর নিয়াউচি উইকেট দুটি নিয়েছেন।

বাংলাদেশের দেয়া ৩০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে স্বাগতিকরা।