নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৪৩

সাহস ডেস্ক

গোল করলেন কৃষ্ণা, আবার করালেন। জোড়া গোল করলেন স্বপ্না। সেরা ছন্দে ছিলেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে বারবার হানা দিচ্ছিলেন স্বপ্না। শুধু রেফারির শেষ বাঁশি বাজানো অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত রেফারির বাঁশি। উল্লাসে মেতে উঠলেন সাবিনা, কৃষ্ণা, স্বপ্নারা। সবাই এক সঙ্গে মাথা নোয়ালেন মাঠে। এরপর মাথা তুলে ভোঁ-দৌড়। মেয়েদের ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল। দেশের হয়ে দুই গোল করেন স্বপ্না, বাকি গোলটি করেন কৃষ্ণা রানী।

গ্রুপের সেরা হওয়ার লড়াই ছিল এ ম্যাচটি। আগের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া বাংলাদেশের সামনে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান যেখানে ৫৮ নম্বরে। বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১৪৭তম। কিন্তু খেলা দেখে র‍্যাঙ্কিং মনে হলো উল্টো। নারীদের সিনিয়র ফুটবলে এই প্রথমবার ভারতকে হারাল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ পাবে ভূটানকে। বাংলাদেশের তুলনায় দুর্বল দল ভুটান। তাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার পথ অনেকটা সুগোম সাবিনাদের।

এদিন শুরু থেকেই ম্যাচের দাপট ও নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। যার ফলে ম্যাচের ৭ম মিনিটে গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। তবে ফাউলের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপরও গোল পেতে দেরি হয়নি সাবিনাদের। ম্যাচের ১২ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণে সাবিনা পাস বাড়ান বা দিকে থাকা কৃষ্ণাকে। কৃষ্ণা বল ধরে দারুণ পাস বাড়ান স্বপ্নকে। স্বপ্নার নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে ১-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সমতায় ফিরতে মরিয়া ভারত ১৯ মিনিটে বক্সের বাইরে বিপদজনক জায়গা থেকে ফ্রি কিক পেয়েছিল। তাদের নেয়া শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়।

তার তিন মিনিট পরই আবার ভারতকে স্তব্ধ করে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচের ২২তম মিনিটে বা প্রান্তে থ্রোয়িং থেকে তৈরি হওয়া বল ধরে কৃষ্ণা টোকা মেরে স্বপ্নকে পাস দিয়েই ভেতরে ঢুকে যান। স্বপ্নার কাছ থেকে ফিরতি বল নিয়ে আড়াআড়ি শটে দারুণ গোল করেন কৃষ্ণা। এতে ২-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর প্রথমার্ধের বাকিটা সময় খেলা কিছুটা মন্থর হয়ে গেলেও ভারতকে কোন সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশের ডিফেন্স। আঁখি খাতুনদের পজিশন সেন্স ছিল প্রখর। ভারতের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের তেমন কোন স্পেস দেননি তারা। পরে ২ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সাবিনা খাতুনের দল।

বিরতি থেকে ফিরেই ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে ডিফেন্স ভেদ করে ব্যবধান কমানোর সুযোগ এসেছিল ভারতীয় মেয়েদের সামনে। কিন্তু গোলরক্ষক রুপনা চাকমার দক্ষতায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ। এর ৬ মিনিট পরেই আবারও উল্লাসে মাতে বাংলাদেশর মেয়েরা। ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে সাবিনার ডিফেন্স চেরা পাস ধরে ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে যান স্বপ্না। তার নেয়া নিখুঁত শটে বল জালে জড়িয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করেন স্বপ্না। এতে তার জোড়া গোল পূর্ণ হয়ে যায়।

এরপর ম্যাচের বাকিটা সময় ওই তিন গোল ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশের মেয়েরা। ভারত আক্রমণের চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের ডিফেন্সে খেই হারায় তারা। প্রতি আক্রমণে উল্টো আরও কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। সেসব কাজে না লাগলেও বড় জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসর মাতাল বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত