সাফজয়ী ফুটবলার

কৃষ্ণা-শামসুন নাহারের লাগেজের তালা ভেঙে চুরি, পদক্ষেপ নেবে বাফুফে

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫০

সাফের শিরোপা উচিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ছবি: এফসি বাঁধন/দৈনিক সাহস

সাফজয়ী ফুটবলার শামসুন নাহার সিনিয়র ও কৃষ্ণা রানী সরকারের লাগেজের তালা ভেঙে ডলার, কাপড়চোপড় ও অন্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) নেপাল থেকে ঢাকায় ফেরার পর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে এসে এ দুই খেলোয়াড় ব্যাগ খুলে ডলার পাননি। যা ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই লাখ টাকার সমমান। তবে টাকা না পাওয়া গেলে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। বাফুফের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজা কিরণ বলেন, ‘ওরা বাচ্চা মেয়ে। ওদের কাছে তো এটা অনেক বেশি টাকা, এই টাকাটা যদি কোনোভাবে না পাওয়া যায়, তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমুন্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ২০২২ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ এবং এবারই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। ‘হিমালয়’খ্যাত নেপালে প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ে বুধবার (২১ সেপ্টম্বর) দুপুরে দেশে ফেরেন সাফ চ্যাম্পিয়নরা। বর্ণাঢ্য আয়োজনের অংশ হিসেবে ফুটবলারদের সাদরে বরণ করার জন্য নানা আয়োজন ছিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আনন্দ-উৎসবে সাবিনার দলকে সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে ভিড় করে জনতা-সমর্থকরা। বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে শিরোপা হাতে আনন্দ-উল্লাসে বাফুফে ভবনে আসেন কৃষ্ণা-শামসুন নাহাররা। মানুষ যখন উচ্ছ্বাসে ব্যস্ত, তখনই দুঃখজনক খবর পান ফুটবল মেয়েরা।

বিমানবন্দর থেকে বাফুফের ভবনে যাওয়ার পথে। ছবি এফসি বাঁধন/দৈনিক সাহস

জানা গেছে, কৃষ্ণা রানি সরকার ও শামসুন নাহারের লাগেজ কেটে ১৩ শ ডলার খোয়া যায়। পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও খোয়া যায়। কৃষ্ণার লাগেজ থেকে ৯০০ মার্কিন ডলার ও বাংলাদেশি ৫০ হাজার টাকা এবং শামসুন নাহারের লাগেজ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার খোয়া যায়। তারা ছাড়াও মার্জিয়ার কিছু নেপালি রুপি ও অন্যদের সাবান খোয়া যায়। এছাড়া ঋতুপর্ণা ঘোষের লাগেজ টানাটানি করে নষ্ট করা হয়েছে। এরকম ব্যাগ টানাটানি করা হয়েছে কয়েকজনের। একটা হ্যান্ড লাগেজ খুলে উল্টিয়ে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় শামসুন নাহার বলেন, ‘আমার ৪০০ ডলার হারাইছে। সাথে ছিল কৃষ্ণার ৯০০ ডলার আর ৫০ হাজার টাকা। এটাতো অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। এর আগে কখনও হয়নি এরকমটা। এবারই হইছে আমার সাথে।’

বিমানবন্দরের লাগেজ বেল্টের এক পাশে পড়ে ছিল সাবিনা, কৃষ্ণাদের লাগেজগুলো। সেখানে থাকা কয়েক কর্মকর্তা বুধবার বলছিলেন, ‘এই লাগেজগুলো কাদের? কেউ নিচ্ছে না কেন?’ এরপর বাফুফের পক্ষ থেকে মেয়েদের লাগেজগুলো সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বাফুফে ভবনে গিয়ে খেলোয়াড়দের কয়েকজন নিজেদের লাগেজের তালা ভাঙা পান। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরে একটি লম্বা ব্যাগে ট্রলির মধ্যে ছিল সবকিছু। সেখান থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ ফুটবল দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান এমন ঘটনায় প্রচণ্ড হতাশ, ‘বিমানবন্দরে নামার পর জানতে পারি কৃষ্ণা, শামসুন নাহারসহ আমাদের দলের ফিজিওর বেশ কিছু জিনিসপত্র খোয়া গেছে। টাকাপয়সাও হারিয়েছে। আমরা বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কিরণ আপাকে (মাহফুজা আক্তার, বাফুফে মহিলা উইং চেয়ারম্যান) জানিয়েছি। আপা এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আশা করি, এ ব্যাপারে একটা সমাধান হবে।’

কৃষ্ণা ও শামসুন নাহারের টাকাসহ জিনিসপত্র না পাওয়া গেলে পদক্ষেপ নেবে বাফুফে। ছবি: সংগৃহীত

কৃষ্ণা-শামসুন নাহারদের টাকা সহ জিনিসপত্র খোয়া যাওয়া সম্পর্কে বাফুফে মহিলা উইং চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘আমরা যখনই জানতে পারলাম তাদের এই টাকাগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আমরা সাথে সাথেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকেও জানানো হয়েছে।’ তখন তিনি জানান, ‘আমরা যেহেতু নেপাল থেকে এসেছি, তাই এটা বলা মুশকিল আসলে ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে। উনারা বিষয়টা অনুসন্ধান করে তারপর জানাবেন।’

এ ব্যপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উপর ওঠা অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তালাবদ্ধ অক্ষত লাগেজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বেলা ১টা ৪২ মিনিটে বিমান ল্যান্ড করার পর ১টা ৫৯ মিনিটে লাগেজ মেক-আপ এরিয়াতে লাগেজ ড্রপ করা হয়। ২টা ৮ মিনিটে সেটি সম্পন্ন হয়। এরপর বাফুফে প্রোটোকল প্রতিনিধি ও ২ জন টিম অফিসিয়াল লাগেজ সম্পূর্ণ অক্ষত ও তালাবদ্ধ অবস্থায় বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নেয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মেলেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’

তাহলে কি খুঁজে পাওয়া যাবে না মেয়েদের হারানো টাকা ও জিসিনপত্রাদী? এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশ (বাফুফে) কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, জানতে চাইলে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘ওরা বাচ্চা মেয়ে। ওদের কাছে তো এটা অনেক বেশি টাকা, তবে এই টাকাটা যদি কোনোভাবে না পাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ জানান, ‘আমরা সরাসরি সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এমনকি আমরা দুটো জিডিও করেছি। মতিঝিল থানায় একটি জিডি করা হয়েছে এবং বিমানবন্দর থানায় আরও একটি জিডি করা হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত