টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

মেইয়াপ্পনের হ্যাটট্রিক, সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫৪

গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নামিবিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। এ হারে ‘এ’ গ্রুপের তলানিতে থেকে স্বাভাবিক হিসেব জটিল করে ফেলেছিল লঙ্কানরা। সুপার টুয়েলভে উঠতে তাই বাকি দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। তবে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শুধু জিতলেই হবে না, বরং রানরেটও বাড়াতে হবে। আর সেটাই করেছে দাসুন শানাকার দল। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আরব আমিরাতকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা।

এদিকে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন আরব আমিরাতের লেগ স্পিনার কার্তিক মেইয়াপ্পন। ছেলেদের বিশ্বকাপে (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) আইসিসির সহযোগী দেশ আরব আমিরাতের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেইয়াপ্পন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার ৩৯তম হ্যাটট্রিক।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) জিলংয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৭.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ৭৩ রানে থেমে যায় আরব আমিরাত। এতে ৭৯ রানের বিশাল জয় পায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

বড় জয় ও রানরেট বাড়ানো ম্যাচে শুধু টপ অর্ডারে প্রথম তিন ব্যাটারই পৌঁছাতে পাড়ে দুই অঙ্কের ঘরে। এ ছাড়া লঙ্কানদের আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। তবে টপ অডারের প্রথম তিন ব্যাটারই জয়ের জন্য রানের ভিত গড়েন। পাথুম নিশাঙ্কা ওপেনিংয়ে নেমে-তো এক প্রান্ত আগলে রাখেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। তিনি ১৯.৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে গেছেন বলেই রক্ষা। নইলে নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মতো অল্প রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ত শ্রীলঙ্কা। ওপেনিংয়ে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে নিশাঙ্কা খেলেছেন ৬০ বলে ৭৪ রানের লড়াকু ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ২ ছক্কা। ১৯তম ওভারের ৫ম বলে নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরান জাহুর খান। আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস করেছেন ১৩ বলে ১৮ রান। তিনি আরিয়ান লকরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। তবে নিশাঙ্কাকে সঙ্গ দিয়েছেন তিনে নামা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, করেছেন ৩৩ রান। ২১ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ছিল তার ইনিংস। বাকিরা ছিল আসা-যাওয়ার তালে।

তবে ইনিংসের মাঝ পথে শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলেন আমিরাতের লেগ স্পিনার কার্তিক মেইয়াপ্পন। ১৫তম ওভারের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে যথাক্রমে ভানুকা রাজাপক্ষে, চারিত আসালঙ্কা ও দাসুন শানাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন মেইয়াপ্পন। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক। আর পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে এই সংস্করণে হ্যাটট্রিক করলেন ২২ বছর বয়সী এ লেগ স্পিনার। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি (২০০৭), নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার (২০২১), দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (২০২১) ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা (২০২১) হ্যাটট্রিক করেছেন।

হ্যাটট্রিকের পর সতীর্থদের সঙ্গে কার্তিক মেইয়াপ্পন।

মেইয়াপ্পনের হ্যাটট্রিকের তিনটি ডেলিভারিও ছিল দুর্দান্ত। ডিপ কাভারে ফিল্ডার রেখে বড় শট খেলার ফাঁদে ফেলে ভানুকা রাজাপক্ষেকে আউট করেন। প্রথম ডেলিভারিটা একটু ঝুলিয়ে ছেড়েছিলেন, রাজাপক্ষেও কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। সীমানা পার করতে পারেননি। বল গিয়ে সরাসরি জমা পড়ে আমিরাতের ফিল্ডার কাশিফ দাউদের হাতে। ৫ রান করে ফেরেন রাজাপক্ষে। এর পরের ডেলিভারিটি ছিল গুগলি। বাঁহাতি ব্যাটার আসালঙ্কা তা বুঝতেই পারেননি। ক্যাচ দেন উইকেটকিপার ভৃত্য অরবিন্দকে। শেষ ডেলিভারিটিও ছিল গুগলি। বল উইকেটে বাঁক নিয়ে একটু উঠে শানাকার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। দুজনেই শূন্য রানে ফেরেন। এরপর ৩ রানের মধ্যে ওয়ানিন্দু হারারাঙ্গাকেও হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে ৭ম উইকেটে করুণারত্নের সঙ্গে নিশাঙ্কা ২৩ বলে ৩০ রানের জুটি গড়ে দেড় শ রান পার করেন।

আরব আমিরাতের হয়ে কার্তিক মেইয়াপ্পন ৪ ওভার করে ১৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। জাহুর খান ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। আর আফজাল খান ও আরিয়ান লাকরা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

লঙ্কানদের দেয়া ১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এবার বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলো যেমন খেলছে ঠিক তার বিপরীত ব্যাটিং করেছে আরব আমিরাত। এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়ার মতো সহযোগী দেশগুলো। সেরকম কিছুই করতে পারেনি আরব আমিরাত। যদিও প্রথম ওভারে লঙ্কান পেসার প্রমোদ মাদুশানকে দুই চার মেরে মোট ১০ রান তুলে ভালোই শুরু করেছিলেন আমিরাতের দুই ওপেনার চিরাগ সুরি ও মুহাম্মদ ওয়াসিম। পরের ওভারেও কোনো উইকেট হারায়নি আমিরাত। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসে জোড়া সাফল্য পায় শ্রীলঙ্কা। মোহাম্মদ ওয়াসিম ও আরিয়ান লারকাকে তুলে নেন লঙ্কান পেসার দুষ্মন্ত চামিরা। এরপর আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি আমিরাত।

তৃতীয় ওভার শেষে ২ উইকেটে ১৭ রান তোলা আমিরাত পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারের মধ্যে আরও ২ উইকেট হারায়। পঞ্চম ওভারে সিপি রিজওয়ানকেও তুলে নেন চামিরা আর ৬ষ্ঠ ওভারে প্রমোদ মাধুশান ফেরান চিরাগ সুরিকে। এতে ৪ উইকেটের বিনিময় পাওয়ার প্লে-তে আমিরাত তোলে ২৩ রান। তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। বাকিটা যেন স্রেফ খেলার জন্য খেলা, নবম ওভারে বাসিল হামিদকে আউট করেন শানাকা। পরের ওভারে ভ্রিতা অরভিন্দকে তুলে নেন হাসারাঙ্গা। অর্থাৎ ১০ ওভার শেষে আমিরাতের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৩৬ রান। এর দুই ওভার পর আবারও হাসারাঙ্গা ফেরান কাসিফ দাওদওকে। হ্যাটট্রিক ম্যান মেইয়াপ্পনকে স্টাম্পিং করে ৮ম উইকেট ফেলেন মহেশ থিকসেনা, আয়ান খানকে ছেঁটে পরের ওভারে নবম উইকেট তুলেন হাসারাঙ্গা। শেষ উইকেটটি তুলে নেন মাহেস থিকসেনে।

লঙ্কানদের হয়ে ৪ ওভার করে ১ মেডেন নিয়ে মাত্র ৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দুষ্মন্ত চামিরাও ৩.৫ ওভার করে ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মাহেস থিকসেনে ৩.১ ওভার করে ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট এবং প্রমোদ মাধুশান ও দাসুন শানাকা ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন পাথুম নিশাঙ্কা।

আমিরাতের বিপক্ষে ৭৯ রানের বড় জয় পায় শ্রীলঙ্কা। এই জয়ে ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের গ্রুপে তৃতীয়স্থানে উঠে এল শ্রীলঙ্কা (‍+০.৬০০)। নিজেদের শেষ ম্যাচটি জিতলেই সুপার টুয়েলভে উঠে যাবে শানাকার দল। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নেদারল্যান্ডস (‍+০.১৪৯)। ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নামিবিয়া (+১.২৭৭)। ২ ম্যাচে ০ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা আমিরাতের রানরেট –২.২০৮।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত