নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করলো যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ১৬:১৪

সাহস ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করে দিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার (২৪ জুন) ৫০ বছরের পুরোনো গর্ভপাতের জন্য মার্কিন নারীদের সাংবিধানিক অধিকারের আইনটি বাতিল করা হয়। এদিকে, গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। আবার অনেকে বলছেন, এই আইনের ফলে আমেরিকার লাখ লাখ নারীর জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করবে এবং দেশটিতে এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়বে। ইতঃমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির রাজ্য সরকার গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহের পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মার্কিন নারীরা ১৯৭৩ সাল থেকে গর্ভপাতের যে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন, তা কার্যত রহিত হয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘১৯৭৩ সালের আইনে গর্ভধারণের পর ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ সময়কালেও গর্ভপাত করার এখতিয়ার রাখা হয়েছে। এটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, মার্কিন সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। ‘গর্ভপাতের অধিকার সংবিধানের আওতায় থাকতে পারেনা এবং গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণের অধিকার অবশ্যই মানুষের এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করা উচিৎ।’

এক প্রতিবেদেন বিবিসি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এখন রক্ষণশীল বিচারকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার রোহিত করার পক্ষে মতামত দেন ছয়জন বিচারক, বিপক্ষে দেন তিনজন।

ধারণা করা হচ্ছে এই রায়ের পর অর্ধেকের বেশি অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ অথবা এটির ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাৎক্ষণকভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হবে- ইতঃমধ্যে এমন আইন পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্য।

এক জরিপে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানধারণে সক্ষম অন্তত ৩ কোটি ৬০ লাখ নারী গর্ভপাতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। সেখানে বাইডেন বলেন, যেভাবে নারীদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এটিকে মৌলিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, নিষ্ঠুর এই সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে- নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে নারী অধিকারের বিষয়টি নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হবে।

রক্ষণশীলদের জন্য অবশ্য আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনেক বড় বিজয়। তারা ১৯৭৩ সালে গর্ভপাতকে বৈধতা দেওয়ার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটিই সংবিধানকে অনুসরণ করছে এবং মানুষকে সেই অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, যা তাদের অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।

সাহস২৪.কম/এআর/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত