"ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি"

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৫

সাহস ডেস্ক

তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ ভূমিকম্পে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। সোমবার ভোরে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে ৭.৮ মাত্রায় আঘাত হানে ভূমিকম্পটি। বিধ্বস্ত হওয়া দালানগুলোর নিচে চাপা পড়া মানুষদের আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়। এমনই মর্মান্তিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তুরস্কে ভ্রমণ করতে যাওয়া ব্রিটিশ পর্যটক টিমোথি হোয়াইটিং। বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ দুর্যোগের ভয়াবহতা বর্ণনাকালে তিনি জানান, "এ যেন পারমাণবিক বিস্ফোরণ, সবাই দলানের নিচে চাপা পড়ে আছে, চিৎকার করছে। অথচ কাউকে জীবিত বের করে আনার মতো সম্ভাবনা নেই। এরই সাথে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা, তুষার ও বৃষ্টি যা উদ্ধারকাজে বাধার সৃষ্টি করছে।" 

দুর্যোগের সময় ব্রিটিশ এই পর্যটক তুরস্কের আন্তাকিয়া প্রদেশের হাতা শহরে অবস্থান করছিলেন। সেসময়ের চিত্র উপস্থাপন করে তিনি বিবৃতিতে আরও বলেন, "এখানকার লোকেরা অনেক বেশি ছুটোছুটি করছিলো। অনেকের পায়ে জুতা নেই। জীবন বাঁচাতে যে যার মতো এদিক সেদিক ছুটছে।" ভূকম্পনের সময় গেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন টিমোথ। এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ অবস্থানে যেতে সক্ষম হন এই পর্যটক।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে শুধু তুরস্কেই নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৪১৯ জন। আহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। অন্যদিকে সিরিয়ায় নিহত হয়েছে এক হাজার ৬০২ জন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারীরা সময়মতো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ এই ভূমিকম্পকে 'উল্লেখযোগ্য' হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে গবেষকরা। ফল্ট লাইন বরাবর প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে এটি আঘাত হেনেছে এবং এর কারণে ভবনগুলোতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফাউর ওয়াকার বলেছেন, "যে কোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প এটি। গত ১০ বছরের মধ্যে মাত্র দুটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল, আর এর আগের ১০ বছরে মাত্র চারটি ভূমিকম্প এ মাত্রার ছিল।" তবে শুধু কম্পনের শক্তির কারণেই এতো বেশি হতাহত হয়নি। আঘাতটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোরে দিকে ঘটে। এ সময় অধিকাংশ মানুষই ছিলো ঘুমে বিভোর। ধসে পড়া ভবনগুলোর দৃঢ়তা নিয়েও ছিলো প্রশ্ন। এ ছাড়াও এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে গত দুইশো বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে কোনও বড় ভূমিকম্প হয়নি বা কোনও সতর্কতা সংকেতও ছিল না। তাই প্রায়ই ভূমিকম্প মোকাবেলা করে এমন অঞ্চলের তুলনায় এখানকার প্রস্তুতির মাত্রা বেশ কম হবে।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলকানো এন্ড রিস্ক কমিউনিকেশন বিভাগের রিডার ড. কারমেন সোলানা বলেছেন, "দুর্ভাগ্যবশত দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো খুব একটা ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়। তাই জীবন বাঁচানো এখন নির্ভর করবে উদ্ধার তৎপরতার উপর। জীবিতদের উদ্ধারে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪৮ ঘণ্টা পর জীবিত মানুষের সংখ্যা অনেক কমে যায়।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও বলছে, দুই দেশ মিলিয়ে দুই কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ভূকম্পের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি শিশু রয়েছে। ডব্লিউএইচওর সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং এর আগে জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী কমিটিকে বিবৃতিটি জানিয়েছেন। এদিকে জাতিসংঘ, ইইউ, ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ইরাক, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে  পাঠানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা।  তবে সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযানে ইতোমধ্যেই সমস্যা বাড়তে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তুরস্ক থেকে জাতিসংঘের জরুরি সাহায্য পাঠানোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত