চারদিকে ছড়িয়ে লাশ, স্বজনদের আহাজারি

ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেকে হতাহত হন। ছবি: ওড়িশা টিভি

চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। কেউ স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন, কারও চোখেমুখে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার আতঙ্ক। ভারতের ট্রেন দুর্ঘটনার যেসব ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে শুধু ভয়াবহতা আর হাহাকার। 

ভারতের মিডিয়াতে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ট্রেনের কামরা কাত হয়ে পড়ে আছে রেললাইনের ধারে। তার সামনেই দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে গিয়েছে দেহ। পাশে ছড়িয়ে আছে জামাকাপড়, ব্যাগপত্র।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়, দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ২৮৮ জনের মরদেহ ও অন্তত ৯০০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ওড়িশা রাজ্যের ফায়ার সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু সারেঙ্গি বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজ্য প্রশাসনের মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা এএফপিকে জানিয়ে বলেছেন, হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে ঘটনাস্থলে সক্রিয় আছে ২ শ’রও বেশি অ্যাম্বুলেন্স।

রেললাইন থেকে বেশ খানিকটা দূরে উল্টে থাকা ট্রেনের বগি দেখতে সকাল সকাল ভিড় করেছেন অনেকে। স্থানীয় কৌতূহলীরা ট্রেনের কাছে গিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা দেখছেন। দুর্ঘটনার পর ট্রেনের বেশ কিছু কামরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ট্রেনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রপাতির টুকরো।

দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনযাত্রী গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেনটি ধাক্কা খেল। আমি যে বগিতে ছিলাম, সেটি তীব্র গতিতে লাইনচ্যুত হয়ে গেল। এরপর সেটি মাটির ওপর দিয়ে বেশ কিছুদূর গিয়ে থামল। তখন দেখি পাশের জানালার শিক ভেঙে গেছে। কেউ একজন জানালার শিক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আর আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম।

শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলো ছিটকে পড়ে উল্টো দিকের লাইনে। কিছুক্ষণ পর উল্টো দিকের লাইন দিয়ে আসে হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনটি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিটকে পড়া বগির ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও ৩ থেকে ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। আরো রয়েছে ওড়িশা ডিজাস্টার র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)।

দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনার খবরে টুইটারে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত।’

মোদি দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারকে ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।