বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস আজ

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ব্রেইন টিউমার নিরাময়যোগ্য

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ১১:১১

ডা. তাহমিনা হাসান

আজ ৮ জুন বৃহষ্পতিবার বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস। 

যেকোন বয়সের যেকোন ব্যাক্তি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হতে পারে। পয়তাল্লিশ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি এবং শিশুদের মধ্যে ছয় থেকে নয় বছর বয়সীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক।

ব্রেইন টিউমার থেকে প্রাণহানী ঘটতে পারে। তাই রোগটির নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই টিউমার মস্তিষ্কে হতে পারে। আবার শরীরের অন্য অংশে তৈরি হয়ে মস্তিষ্কে ছড়াতে পারে।

সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে ব্রেইন টিউমার ঠেকানো সম্ভব। তবে রোগ হয়ে গেলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ব্রেইন টিউমার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। যার জন্যই এই দিবসের উদ্ভব।

ব্রেইন টিউমারের মত একটি মারাত্মক রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে চিহৃত। 

১৯৯৮ সালে গঠিত জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন নামের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে নিরাময়যোগ্য। না হলে ক্যানসার পুরো মস্তিষ্কের কোষে ছড়িয়ে পড়লে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই সামান্য কিছু লক্ষণ দেখলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এজন্য সবারই জেনে রাখা উচিত, ব্রেন টিউমারের উপসর্গ কী কী। যদিও ব্রেন টিউমারের লক্ষণ কেমন হবে বিষয়টি রোগীভেদে বদলে যায়। ব্রেইন টিউমারের অস্ত্রোপচার বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।এখন দেশেও নিয়মিত এই অস্ত্রোপচার হচ্ছে। 

ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা দুরূহ। তাই দরকার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। চিকিৎসার জন্য ফান্ড গড়ে তোলা, পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা, আক্রান্তদের মানসিকভাবে শক্তি জোগানো, সুস্থদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব।


ব্রেইন টিউমার কী?

মস্তিষ্কের কোষের টিউমার হলো ব্রেইন টিউমার। যখন মস্তিষ্কের কোনো বিশেষ অঞ্চলের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ে, তখন তাকে ব্রেইন টিউমার বলে। ব্রেইন টিউমার দুই রকমের হতে পারে— বিনাইন বা শিষ্ট টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট বা দুষ্টু টিউমার।

যেকোনো বয়সেই ব্রেইন টিউমার হতে পারে। কিছু টিউমারের সূত্রপাত হয় মস্তিষ্কেই। এদের বলে প্রাইমারি ব্রেইন টিউমার। কিছু ব্রেইন টিউমারের সূত্রপাত হয় শরীরের অন্য কোনো স্থানের টিউমার থেকে। এদের বলে সেকেন্ডারি বা মেটাস্টাটিক ব্রেইন টিউমার।


ব্রেন টিউমারের লক্ষণ

- দীর্ঘ মেয়াদে মাথাব্যথা
- খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- কথা জড়িয়ে যাওয়া, কথা বলতে অসুবিধা
- আচরণগত পরিবর্তন ইত্যাদি
- বমির ভাব বা বমি হওয়া 
- দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া 

রোগ নির্ণয়
ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে যথাসম্ভব দ্রুত নিউরোমেডিসিন বা নিউরোসার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রোগ নির্ণয়ে নিচের পরীক্ষাগুলো সহায়ক :  

* ব্রেনের সিটিস্ক্যান ও এমআরআই  
* সিটি গাইডেড এফএনএসি
* স্নায়ুতন্ত্রের পরিবহন ক্ষমতা বা নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট বা ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি।
* স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা দেখার জন্য ইলেকট্রো এনকেফালোগ্রাফি বা ইইজি।

চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের ধরন, তীব্রতা, আকার ও অবস্থানের ওপর। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি হলো এর মূল চিকিৎসা। লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন: খিঁচুনি বন্ধ করার ওষুধ, বমির ওষুধ ইত্যাদি।

 

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক

২০০৯ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলি স্কুল অব হেলথ, কোরিয়ান ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার এবং সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলিতভাবে গবেষণার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে। ২০২১ সালে তাদের প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে টিউমার তৈরির সম্পর্ক আছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি এক হাজার ঘণ্টা বা প্রতিদিন ১৭ মিনিট করে ১০ বছর কথা বলা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের টিউমারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বাড়ে। তবে এমন বেশ কিছু গবেষণা আছে, যেখানে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনে কথা বলার সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক নেই।


ডা. তাহমিনা হাসান, গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্তব্যরত শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তিনি চিকিৎসাসেবায় সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত