যুদ্ধাপরাধী ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের রায় যেকোন দিন

প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৭, ১৫:৪৬

সাহস ডেস্ক

জামায়াতের সাবেক এমপি আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণা করা হবে। 

উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রেখে আজ আদেশ দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটি হবে ২৯ তম রায়।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম।

আব্দুল আজিজ ছাড়া মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। এ ছয়জনের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে আছে, বাকী পাঁচজন পলাতক রয়েছে। 

আজ যুক্তিতর্ক পেশ শেষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ছয় আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। 

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, গুম, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
১৯৭১ এর ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে আসামীরা পাকিস্তান দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সাথে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ী গ্রামে হামলা চালায়। সেখানে ৪ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ব্রিজের কাছে গনেষ চন্দ্র বর্মণ এর হাত পা মাথার সাথে বেধে ব্রিজের নীচে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং ৩ জনকে ছেড়ে দেয়। আসামীরা আটককৃতদের বাড়ীর মালামাল লুণ্ঠন করে।

’৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, বিকাল অনূমান ৪ টার দিকে আসামীরা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারা দিতে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরের দিন সকালবেলা আসামীরা আটককৃত বয়েজ উদ্দিনকে সুন্দরগঞ্জ থানা সদরের পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকালে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়। 

’৭১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামীরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন ৫টি ইউনিয়নের নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদেরকে ৩ দিন যাবৎ অমানুষিক নির্যাতন করার পর পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের নিকটে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশগুলি মাটি চাপা দেয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত