দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলে বিচারপতি অপসারণ কীভাবে: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৭, ১২:৫৬

সাহস ডেস্ক

কোনো দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে সংসদের মাধ্যমে কীভাবে বিচারপতি অপসারণ হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে আপিল বিভাগ। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে এই প্রশ্ন রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

বৃহস্পতিবার (২৫মে) রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বিশিষ্ট আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় এমন প্রশ্ন রাখেন প্রধান বিচারপতি।

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শাসনতন্ত্রে দেশের সবচেয়ে পবিত্র আইন (সংবিধান) আমরা সংরক্ষণ করি। দেখা গেল, সেখানে এমন কিছু সন্নিবেশিত হলো, যাতে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। পার্লামেন্টে টু থার্ড মেজরিটি (দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) না থাকলে ওই পরিস্থিতিতে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে তখন কী হবে? জুডিশিয়ারি কী করবে? আমাকে এ বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে।’

জবাবে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, লিখিত বক্তব্যে এর ব্যাখ্যা রয়েছে। 

এর আগে অপর আদালত-বন্ধু ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বক্তব্য দেন এবং আদালত-বন্ধু টি এইচ খানের পক্ষে তাঁর ছেলে আফজাল এইচ খান বক্তব্য দেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে সপ্তম দিনের মতো শুনানি চলছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

এর আগে গত ৮, ৯ এবং ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ মে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ আইনজীবীকে আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাঁদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দিতে বলেন আপিল বিভাগ।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ আইনজীবী হচ্ছেন—বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল হক কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। পরে ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫ মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।

এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে রায় প্রকাশিত হয় গত বছরের ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেওয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। ওই আপিলের ওপর শুনানি চলছে।

হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

রায়ে আরো বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত