‘জেনে বুঝে ভুল বিচার করিনি’

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:২৬

সাহস ডেস্ক

অবসরে গেলেন দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ছিল তার শেষ কার্যদিবস। শেষ কার্যদিবসে তাঁকে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। 

এ সময় বিচারপতি নাজমুন আরা বলেন, আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার সুদীর্ঘ বিচারক জীবনে কখনোই জেনে-বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে কোনো ভুল বিচার বা অন্যায় বিচার করিনি।

৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দুপুরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম এই নারী বিচারপতি এ কথা বলেন। 

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, প্রায় ৪২ বছরের বিচারকের জীবন আমার শেষ হলো আজ। বিচার করার কঠিন কাজ ও বিচারকের সীমাবদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার আগ্রহ ছিল আমার। তবে আজকের এ ক্ষণটিতে আমার কষ্ট হচ্ছে এই বিচার অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে, আপনাদের ছেড়ে যেতে।

আল্লাহ আমাকে বিচারক বানিয়েছেন, এ দেশের প্রথম নারী বিচারক। তবে আমার বিচারক হওয়ার পেছনে আমার মরহুম আব্বার ইচ্ছা ও আম্মার প্রেরণা বড় ভূমিকা রেখেছে, যোগ করেন নাজমুন আরা।

১৯৭২ সালের আইনজীবী পেশার প্রথম দিন কোর্টের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, বোধ হয় আমার মনের কোণায় ইচ্ছাটা উঁকি দিয়েছিল- আমি কি জজ হতে পারি না? কিন্তু জানলাম আমি জজ হতে পারি না। ওই সময় বাংলাদেশের নারীরা জজ হতে পারত না। আমি ওকালতি করার বছর দেড়েক পরে ওই বিধান সরকার তুলে দেয়।

বিদায়ী বিচারপতি বলেন, ১৯৭৫ সনের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হয়ে খুলনার জজশিপে ‍মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করি। ওই সময়ে খবরের কাগজে এটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া দুই রকমেরই হয়েছিল। কেউ স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকে নাক সিঁটকেছিলেন- নারী আবার বিচারক হতে পারে নাকি, নারী আবার কী বিচার করবে? কর্মক্ষেত্রে আমি এই দুই রকমের আচরণ পেয়েছিলাম।

বিচারতি বলেন, প্রথম নারী বিচারক হিসেবে ব্যর্থ হয়ে যাইনি। আল্লাহর কাছে তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রথম নারী বিচারক হিসেবে আমি ব্যর্থ হলে হয়তো আজ বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ নারী বিচারক হতো না।

নিজের বিচারকাজ নিয়ে প্রথম নারী বিচারপতি বলেন, আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমি আমার সুদীর্ঘ বিচারক জীবনে কখনোই জেনে-বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে কোনো ভুল বিচার বা অন্যায় বিচার করিনি। আমার অনেক বিচারই হয়তো ভুল হয়ে গেছে, আপিলে গিয়ে হয়তো সংশোধিত হয়েছে।

কিন্তু সে ভুল বিচার আমি জেনে-বুঝে বা অমনোযোগী হয়ে করিনি। জেনে-বুঝে অবিচার করা বা অমনোযোগী হয়ে বা অবহেলা করে ভুল বিচার করা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। পক্ষাশ্রিত হয়ে বা কোনো কারণে বা কারো দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে বিচার করা মহাপাপ। আমার আত্মতৃপ্তি আমি জেনে-বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে বা পক্ষাশ্রিত বা প্রভাবান্বিত হয়ে ভুল বিচার, অন্যায় বিচার করিনি কখনোই।’

অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের পক্ষ থেকে এই নারী বিচারপতির বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এরপর সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সভাপতি জয়নুল আবেদীনও বিচারপতির বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।

এই দুই পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারপতি নাজমুন আরা নিজে তার ৪২ বছরের বিচারিক জীবনের নানা স্মৃতি-অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত