আর কোন পুতুলের মত মৃত্যু দেখতে না হয়

প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০১৭, ১৬:১০

সাহস ডেস্ক

হাঁসি কান্না আর দুঃখ বেদনা নিয়েই জীবন। তবে সেই দুঃখ যদি হয় অপ্রত্যাশিত তবে মেনে নেওয়াটাও অনেকটা কষ্টের। মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ করতে গিয়ে পর পর আঘাত পেলাম দুইবার। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের আব্দুল মালেক।

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না তার পরিবার। আব্দুল মালেকের স্ত্রী আমার হাতটি ধরে কেঁদে ফেলেন। কিছু একটা করার জন্য জোর আকুতি জানান। এক মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে শুরু করলাম সংবাদ আর ফেসবুক প্রচারণা। অবশেষে চিকিৎসার একটা উপায় হয়ে যায়। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি আব্দুল মালেককে। সাতক্ষীরা আনোয়ারা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আব্দুল মালেক। সেদিনের কষ্টটা ভোলার নয়।

সংবাদ সেবার মাধ্যমে জনসেবা করতে গিয়ে কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হয়েছি বার বার। ঘটনা কখনো কখনো এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অসহায় মানুষটিকে অর্ধেক রাস্তায় ফেলে পিছু হটা ছাড়া বিকল্প নেই। কাল্পনিক আর মনগড়া বাজে মন্তব্য এতটাই প্রখর ছিল যে, যে কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে হজম করাটাও দু:সাধ্য। তবু হাল ছাড়িনি। ঘটনার শেষ পর্যন্ত পৌচেছি। যত বাজে মন্তব্য আর যত কটু কথায় শুনি না কেন। যদিও বিষয়গুলো অভ্যন্তরীণ।

এতদিন আপনাদের অবগত করা হয়নি ইচ্ছাকৃত ভাবেই। কেননা, শুরুতেই যদি খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করে দেই তবে এমন মানবিক কাজে কেউ উদ্বুদ্ধ হবেন না। আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আজ যখন সাতক্ষীরায় মানবতার জন্য প্রতিযোগিতা চলছে তখনই মনে হলো বাস্তব কিছু বিষয়গুলো এবার সকলের সামনে আনা দরকার। কেননা তারাও এমন প্রশ্ন আর এমন খারাপ লাগার অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হবেন বার বার। 

আব্দুল মালেকের সেই কষ্টের রেশটা কেঁটেও গেলো। মানবিক ঘটনা নিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ সপ্তাহ খানেক আগে সামনে পড়লো মাজিদা আক্তার পুতুল নামের মেয়েটি। যে এক বছর আগেই আপনার আমার মত সুস্থ স্বাভাবিক ছিলো। হঠাৎ রোগাক্রান্ত হয়ে কঙ্কালে পরিণত হয়। প্রায় মৃত্যুর মুখে।

অবশেষে সংবাদ আর ফেসবুক প্রচারণার পর ১৭ জুলাই সোমবার পুতুলকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। ডাক্তারা আশ^স্ত করেছিলেন পুতুলের সুস্থতার বিষয়ে। হৃদয়বান মানুষের পাঠানো টাকায় হাসপাতালের ৪নং ওয়ার্ডের ১নং বেডে পুতুলের চিকিৎসা চলতে থাকে। প্রয়োজন পড়ে রক্তের সেটিও দ্রুততার সাথে জোগাড় করে পুতুলের শরীরে দেওয়া হয়। 


এই পুতুলের চিকিৎসার জন্য যখন হৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানায় ঠিক তখনই একজন ঘটনাটিকে বিতর্কিত করে তোলে। যদিও আপনাদের পাল্টা জবাবে তিনি তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। পুতুলের চিকিৎসা চলতে থাকে। ২২ জুলাই শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আকষ্মিক মারা যায় পুতুল। 


সবকিছুই আমার নিজের হাতে করা ছিলো পুতুলের জন্য। কোনভাবেই যেন ভুলতে পারছি না সেসব কথা আর স্মৃতিগুলো। পুতুলের শরীরে রক্ত দেওয়ার পর সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকে নিজেই ফোন দেয় পুতুল। একটি মোবাইল ফোনের দাবি জানায়। আমি বলেছিলাম, আপু আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেদিন বাড়িতে যাবেন সেদিন আমি মোবাইল কিনে দেবো। নতুন মোবাইল নিয়েই আপনি বাড়িতে যাবেন। কথাগুলো কানে বাজে বার বার। পুতুল বাড়িতে গেলো ঠিকই কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে নয়। বাড়িতে গেলো তার মরদেহটি। আব্দুল মালেকের পর কষ্টের খাতায় আরেকটি নাম যুক্ত হলো পুতুল। পুতুলের বাড়ি পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে।

আপনার আমার পাশে এমন পুতুলের সংখ্য রয়েছে অসংখ্য। যারা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ। আপনি যদি না পারেন তবে বিষয়টি আমাকে জানাবেন। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো অসহায় সেই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর। কথা দিচ্ছি অর্ধেক পথে কখনো ফেলে আসবো না। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো শেষ সময় পর্যন্ত। আর কোন নতুন পুতুলের মৃত্যু আমি দেখতে চায় না। আপনার আমার পরিবর্তনেই একদিন বদলে যাবে গোটা সমাজ ব্যবস্থা। আসুন না সবাই মিলে একটু চেষ্টা করি।

সাংবাদিক
আকরামুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত