এমপিপুত্রের গাড়িচাপায় মৃত্যু

৩ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্ত শাবাব, জব্দ হয়নি গাড়িও

প্রকাশ : ২১ জুন ২০১৮, ১৮:৫৯

সাহস ডেস্ক

ঢাকার মহাখালীর ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় পথচারী সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনার পর তিন দিন পার হলেও অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরীকে গ্রেপ্তার বা ঘাতক গাড়িটি জব্দে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে পুলিশ বলছে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী ও কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির একমাত্র ছেলে। আর ঘাতক গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫) কামরুন নাহার শিউলির নামে নিবন্ধিত।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুন) কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন বলেন, সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১৯ জুন) রাত ১০টায় রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দেয়ার পর গাড়িটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ন্যাম ফ্ল্যাটে চলে যান শাবাব। এরপর থেকে গাড়িটি সেখানেই রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে গাড়িটি জব্দ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন বলেন, তারা ঘাতক গাড়িটি খুঁজছেন। এখনও জব্দ করতে পারেননি।

ঘটনার তিন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেলিমের পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার পর তিনি বাম্পার ধরে ফেলেন। এর পর গাড়িটির চালক শাবাব ব্যাক গিয়ারে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গতি বাড়িয়ে তিনি আবারও সামনের দিকে এগিয়ে যান। এতে সেলিম ছিটকে ফ্লাইওভারের গার্ডারে গিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মাথা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার পর তিনিসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে করে ওই গাড়ির পিছু নেন। গাড়িটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে। এ সময় এমপিপুত্র শাবাবের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেন শাবাব। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে মনে হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি সাংবাদিকদের কাছে অভিযুক্ত গাড়ির মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেন।

তবে তার দাবি, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেটি নিয়ে উত্তরা যাচ্ছিলেন নুরুল আলম।

নুরুল আলম কোথায় জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই গাড়িচালক এখন কোথায় তিনি তা জানেন না। চালক নুরুল আলমকে তারাও খুঁজছেন।

এ ঘটনায় নিহতের জামাতা আরিফ ভূঁইয়া বাদি হয়ে কাফরুল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। তিনি জানান, তার শ্বশুর নিহত সেলিম ব্যাপারি প্রতিদিনের মতোই রাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের গাড়ি জমা দিয়ে উত্তর খানের বাসায় ফিরতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময়ই বেপরোয়া গতির একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয় এবং ঘটনাস্থলে তার শ্বশুর নিহত হয়।

কাফরুল থানা সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি চাপায় সেলিম বেপারী নিহতের ঘটনায় তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা রেকর্ড করেছে পুলিশ। তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী বুধবার (২০ জুন) কাফরুল থানায় গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ওই সময় গাড়ির আরোহী ছিলেন একজনই, তিনি এমপি পুত্র শাবাব চৌধুরী।

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির জামাতা অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করে মামলা করেছেন। গাড়িটির নম্বরপ্লেট তারা বিআরটিএতে পাঠিয়েছেন। গাড়ির মালিকানার বিষয়ে জানতে পারলে তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।

অবশ্য পুলিশের আগে সংবাদকর্মীরা বিআরটিএতে গিয়ে গাড়িটির মালিকানার তথ্য জানতে পারেন। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের ১৮ মার্চ গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫) বিআরটিএতে নিবন্ধিত হয়েছে। মালিক কামরুন্নাহার শিউলি। তার স্বামী একরামুল করিম চৌধুরী।
সাহস২৪.কম/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত