মকবুলের যুদ্ধাপরাধে অস্বস্তিতে জামায়াত

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:২০

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানপন্থী যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর অপকর্মের দায় তাদেরকে তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত। দলের নেতৃত্বদানকারী বেশীরভাগ বর্ষীয়ান নেতা একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে অথবা কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় আছে। এমন সময় আরেক যুদ্ধাপরাধীকে নতুন আমির নির্বাচিত করে সমালোচনায় জামায়াতে ইসলামী। 

জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠায় দলটিতে ফের অস্বস্তি বিরাজ করছে। গত ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালনের পর ১৭ অক্টোবর দলের পূর্ণাঙ্গ আমির হিসেবে শপথ নেন মকবুল। নতুন আমির পদ পেয়ে শপথ গ্রহণের পরপরই অভিযোগ ওঠে, মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী  অপরাধে যুক্ত ছিলেন। ওই সংবাদের সূত্র ধরেই জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর এ ইস্যুতে চরম বেকায়দায় পড়েছে জামায়াত। চেইন অব কমান্ড ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে দলটি। এদিকে মকবুল আহমাদের যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। 

দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন শপথ নেওয়ার পরপরই এ অভিযোগ! দলের বিরুদ্ধে সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ অনুসন্ধান।’ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, দুটি অনলাইন পত্রিকার খবরে মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে দুটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার সত্যতা তারা অনুসন্ধান করবেন। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে এলে এবং যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তখন মামলা করে তদন্ত করা হবে। জানা যায়, ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পরই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে হরতালে সহিংসতার মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা হয় কারাগারে, নয় তো আত্মগোপনে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নেই রাজনৈতিক প্রকাশ্য কর্মসূচি। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সাত বছর সম্মেলন করতে পারেনি জামায়াত। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাইছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াত বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। একই অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন দলের সাবেক আমির গোলাম আযম। দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও আমৃত্যু কারাভোগ করছেন। এ ইস্যু থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পথ খুঁজছিল জামায়াত। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই, এমন একজনকে আমির পদে চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। রুকনদের ভোটের মাধ্যমে দলের আমির নির্বাচনের কথা বলা হলেও দলের নীতিনির্ধারকরা যুদ্ধাপরাধের না ওঠায়  ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদকেই নিরাপদ ভেবে নতুন আমির হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু এখন আবার নতুন করে বিপাকে পড়েছেন জামায়েত শিবির।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘মকবুল আহমাদ শপথ নেওয়ার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেছেন। আমাদের জানতাম তিনি রাজাকার ছিলেন না কিন্তু এখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় আমাদের টেনশন রয়েই গেল। আমরা অস্বস্তিতেই থেকে গেলাম। আমরাও চাই জামায়াতে ইসলামী রাজাকার কলঙ্ক মুক্ত হোক।’

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন মকবুল আহমাদ। এখন পর্যন্ত তাকে কখনো জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত