সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য জেনে রাখা জরুরী

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:৫২

সাহস ডেস্ক

প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন কাজ নিয়ে কয়েক’শ মানুষ ঢাকায় আসেন তাদের মধ্যে একটা অংশ বিভিন্ন কাজে আসেন সচিবালয়ে। তাদেরকে সচিবালয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় ঘুরতে দেখা যায় সচিবালয়ের গেটে।

এদের মধ্যে অনেকেই আসেন সচিবালয়ে কর্মরত আত্মীয়- স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। আবার কেউ আসেন নিজের কোনও অফিসিয়াল কাজ দ্রুত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা মন্ত্রীর কাছে তদবিরের জন্য। আবার কেউ আসেন নিজের এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের তদবিরের জন্য। কিন্তু গেট পাস না থাকায় অনেকেই সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে পারেন না। সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশের জন্য কিছু নিয়ম মেনে সবার আগে প্রয়োজন হয় গেট পাস।

দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক দফতর হিসেবে সচিবালয়ে অফিস করেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সচিবরা। এছাড়া সরকারের নীতি নির্ধারণী বিশেষ মিটিং এবং সেসব মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় এখানে। যা সারা দেশের মানুষের জন্য সরকারি কর্মকর্তারাসহ দেশের জনপ্রতিনিধিরা বাস্তবায়ন করেন। তাই এখানকার নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতরও বটে। আর একারণেই সরকারের এই শীর্ষ প্রশাসনিক দফতরে প্রবেশাধিকার থাকে নিয়ন্ত্রিত। প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতেই গেটপাসের প্রচলন।

সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা পর্যায়ে একাধিক সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে শুরু হয়ে উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব থাকেন। আর ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব বা সিনিয়র সচিব থাকেন একজন। করে, তাদের কর্মস্থলও এই সচিবালয়েই। এখানে মন্ত্রীরাও অফিস করেন। এদের মধ্যে সবাই চাইলেই আপনার জন্য সচিবালয়ের গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন না। যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সচিব নিজেরাই গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন। 

এছাড়া ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবরা সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য গেট পাস ইস্যু করার এখতিয়ার রাখেন। সিনিয়র সহকারী সচিব এবং উপ- সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারাও গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন, যদি তিনি কোনও মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব হন।সাধারণত ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিবদের একান্ত সচিব হিসেবে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের জন্য উপ সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়।   

এ জন্য আপনাকে প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে, আপনি কার কাছ থেকে গেট পাস নেবেন। আপনি যার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তিনি যদি যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা হন, তা হলেতো তিনি নিজেই আপনার নামে গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন। আর তিনি যদি তা না হন, তাহলে আপনি যার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, তিনি আপনার গেট পাস সংগ্রহের জন্য উপরোক্ত কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হবেন। সে ক্ষেত্রে পাস বইয়ে (রেজিস্টার) আপনার নাম, আপনার ঠিকানা, আপনার পেশা, সচিবালয়ে প্রবেশের কারণ, প্রবেশের সময় এবং আপনার মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ করতে হবে। পাস বইয়ের তিনটি অংশেই এসব তথ্য লিখতে হবে। এর পর একটি অংশ বইয়ের সঙ্গে রেখে বাকি দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন না করে, তা গেটে অভ্যর্থনা কেন্দ্রে মন্ত্রণালয় অনুসারে সংশ্লিষ্ট বুথে জমা দিতে হবে। একটি বুথে একাধিক মন্ত্রণালয়ের পাস জমা নেওয়া হয়। অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বুথে থাকা রেজিস্টারেও আপনার নামসহ তথ্যাদি সংযুক্ত করা হয়। আপনার আত্মীয় বা আপনি যার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, তিনি কোন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার কাছ থেকে আপনার জন্য গেট পাস সংগ্রহ করেছেন, তা আপনি তার কাছ থেকে জেনে নেবেন। 

এরপর আপনার গেট পাস সংগ্রহের জন্য অভ্যর্থনা কেন্দ্রে ওই মন্ত্রণালয়ের বুথে গিয়ে ইস্যু হওয়া পাসের ব্যক্তিবর্গের নামের যে তালিকা রয়েছে, সেখানে  আপনার নাম খুজে পেলে বুথের কর্মকর্তাকে জানাবেন। পাসটি যে আপনার তা নিশ্চিত হতে বুথের কর্মকর্তা গেট পাসে উল্লেখ করা আপনার নাম, আপনার পেশা, আপনার ঠিকানা এবং আপনার মোবাইল নম্বর জানতে চাইবেন। সব কিছু মিলে গেলে গেটপাসের দুটি অংশের একটি রেখে বাকি অংশটি আপনার হাতে দেবেন। গেট পাসটি নিয়ে আপনি গেটে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে দিলে তারা সেটিকে দেখে মাঝখান থেকে কিছু অংশ ছিড়ে আপনার হাতে দেবেন। আপনি সেটিকে নিজের কাছে সংরক্ষণ করে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করবেন এবং আপনার প্রত্যাশিত আত্মীয় বা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করবেন।       

বর্তমানে একজন কর্মকর্তা একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচটি গেট পাস ইস্যু করতে পারবেন। এক সময় ছিল একজন কর্মকর্তা সীমাহীন এবং অগ্রিম গেট পাস ইস্যু করতে পারতেন। পরে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং অগ্রিম পাস দেওয়া বন্ধ করে সর্বোচ্চ ১০টি পাস ইস্যু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা আরও নিয়ন্ত্রণ করে বর্তমানে একজন কর্মকর্তাকে একদিনে সর্বোচ্চ ৫টি পাস ইস্যু করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। 

এই নিয়মাবলী মেনে নিলে অনেক বিড়ম্বনা এড়িয়ে অল্প সময়েই সচিবালয়ে কাজ সেরে নেওয়া সম্ভব। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত