রয়টার্স-এর প্রতিবেদন

রিজার্ভ চুরি : বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা দায়ী

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:০৮

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ৮১ মিলিয়ন (কার্যত ১০ কোটি ১০ লাখ) মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় সে দেশের সরকারের করা প্যানেলের তদন্তে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তার অবহেলা ও অসতর্কতাও এর জন্য দায়ী। ওই প্যানেলের প্রধান বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে এ কথা জানান। বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) ‘এক্সক্লুসিভ : বাংলাদেশ প্যানেল ফাইন্ডস ইনসাইডারস নেগলিজান্ট ইন সেন্ট্রাল ব্যাংক হেইস্ট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে রয়টার্স একথা জানায়। তবে প্রতিবেদনে ওই পাঁচ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, তদন্ত প্যানেল অনুসন্ধানের পর সরকারের কাছে গত মে মাসে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর এই প্রথম প্যানেল প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ওই কর্মকর্তারা নিচু ও মধ্যম শ্রেণির এবং তারা ওই অপরাধের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নন। 

ফরাসউদ্দিন তার নিজ কার্যালয়ে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তাদের (ওই পাঁচ কর্মকর্তা) ভেতর অবহেলা ও অসতর্কতা ছিল এবং তারা এ অপরাধের পরোক্ষ সহযোগী। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলেছে, এটা নিশ্চিত যে, বাইরের কেউ এ অপরাধকর্ম করেছে।’  
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বে সবচেয়ে বড় সাইবার চুরির মধ্যে একটি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা। তদন্ত প্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সরকার জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। সরকারের ভাষ্য, এতে করে অনুসন্ধান সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে অপরাধীরা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি বাংলাদেশ ওই তদন্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের সঙ্গে শেয়ার করেছে কি না। সংঘটিত এ অপরাধ নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে যেসব সংস্থা, তার মধ্যে এফবিআই-ই প্রধান।

এদিকে ফরাসউদ্দিন ওই পাঁচ কর্মকর্তার নাম না বললেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত  ব্যাংকটির কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে সম্মত হননি।
চাঞ্চল্যকর এই চুরির ঘটনার পর দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং কে এই অপরাধী, সে সম্পর্কে একটি শব্দও বলা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। সাইবার হামলা ঠেকানোর মতো ফায়ারওয়াল না থাকায় এবং সুইফটের সঙ্গে যুক্ত নেটওয়ার্ক সুইচের দুর্বলতার কারণে এ অর্থ চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইনে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায়। বাকি দুই কোটি ডলার যায় শ্রীলংকায়। শ্রীলংকা থেকে দুই কোটি ডলার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ফিরে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আর ফিলিপাইন থেকে দেড় কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এখন চলছে বাকি অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত