শ্রীলঙ্কার কর বাধায় দুই দেশের বাণিজ্যে পিছিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৪৯

সাহস ডেস্ক

শ্রীলঙ্কা সরকারের কর বাধায় দুই দেশের বাণিজ্যে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি কমছে বছরে ১৫ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত। টানা চার বছর শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের ঘাটতির সমান। 

২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করেছে ২৩ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে সেদেশ থেকে আমদানি করে ৩৯ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলারের। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানি ও আমদানি ছিল যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার ও ৬৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয় ২৩ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলার ও ৪৪ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৫ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার ও ৪৫ মিলিয়ন ডলার। এ বছর দেশটিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিলো ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে চাল, কৃষিপণ্য, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, কাগজ, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, আসবাবপত্র, ফার্মাসিউটিক্যালের। পণ্যের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্য বরাবরই বাংলাদেশের পক্ষে ছিলো। 

কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে এখন ভাটা পড়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার সেদেশে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বাধা তৈরি করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ বারবার কূটনৈতিক উদ্যোগ নিলেও শ্রীলঙ্কা বিষয়টিকে তার দেশের বাণিজ্যিক নিরাপত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ বাধা দূর করতে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত সচিব পর্যায়ে সমঝোতা ছাড়া অগ্রগতি বলতে সামান্যই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুন্সী সফিউল হক জানান, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এফটিএ’র বিকল্প নেই। কিন্তু দেশটি তাদের কলম্বো ও হামবানটোটা বন্দর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকারার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে মজবুত বাণিজ্যিক সম্পর্ক চাই। শ্রীলঙ্কা সরকার আমাদের দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় অন্যান্য দেশের মতোই কিছু নীতি গ্রহণ করেছে। এতে হয়তো সাময়িকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানিতে তা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়ে গেলে তা আর থাকবে না। বরং এতে দুই দেশের বাণিজ্যই লাভবান হবে।’

হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ীরা এদেশে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করেছেন। অনেকে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ নির্মাণ, তৈরি পোশাক ও আইটি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশি পণ্যের মান অনেক উন্নত। এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে দুই দেশেরই রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়বে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা এফটিএ করতে চলেছি। এটি হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা এক দেশ অন্য দেশকে সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত