তিন তালাক প্রথা জঘন্য : ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

মুসলিমদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের রাস্তা হিসাবে তিন তালাক প্রথা অত্যন্ত জঘন্য বলে মন্তব্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই ধরনের প্রথা কোনভাবেই কাম্য নয় বলেও জানিয়েছেন আদালত।

দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে.এস. খেহরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে তিনি তালাক প্রথা নিয়ে ১২ মে (শুক্রবার) দ্বিতীয় দিনের মামলার শুনানি হয়।

সেখানেই বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাজে এমন কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে যেখানে তিন তালাক প্রথাকে বৈধ বলে মনে করা হয়। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য এটি একটি নিকৃষ্টতম প্রথা। এই ধরনের বিবাহবিচ্ছেদ প্রথা অপ্রত্যাশিত।

এদিন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী সলমান খুরশিদ আদালতকে সাহায্য করতে নিজেই সওয়াল করতে ওঠেন। তিনি জানান, এটি এমন একটা বিষয় যেখানে আইনি স্ক্রুটিনির কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া নারীদেরও তিন তালাকের বিরোধিতায় 'না' বলার অধিকার থাকা উচিত। নিকাহনামা (বিবাহ চুক্তি)-তেই একটি বিধি তৈরি করে এর সংস্থান থাকার পক্ষে অভিমত দেন তিনি। এসময় বিশ্বের কোন কোন মুসলিম ও অ-মুসলিম দেশে তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ তার একটি তালিকা তৈরি করতে সলমান খুরশিদকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এরপরেই বেঞ্চকে জানানো হয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মরক্কো, সৌদি আরবের মতো দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ।

তিন তালাক প্রথার শিকার হওয়া এক নারীর আইনজীবী রাম জেঠমালানি আদালতে জানান, একমাত্র পুরষরাই তিন তালাক দিতে পারেন, স্ত্রীরা নয়। এটা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা (সাম্যের অধিকার) ভঙ্গ করার সামিল। একতরফা ভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করাটা জঘন্য তাই এটাকে এড়িয়ে চলাই উচিত।  এই প্রথা লিঙ্গ বৈষ্যমের একটি প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ এবং এই প্রথাটি পবিত্র কোরান শরীয়তের পক্ষেও অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন জেটমালানি।

উল্লেখ্য, সংবিধান অনুসারে ‘তিন তালাক’ প্রথা বৈধ কি না তা নিয়ে গত ১১ মে (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচজন ভিন্ন ধর্মের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হয় প্রথম দিনের শুনানি। প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর (শিখ) ছাড়াও এই বেঞ্চে আছেন ক্যুরিয়ান জোসেফ (খ্রিষ্টান), আর.এফ নারিম্যান (পার্সি), ইউ.ইউ ললিত (হিন্দু) এবং আব্দুল নাজির (মুসলিম)।