বেসামরিক মানুষের সুরক্ষার দায়িত্ব অস্বীকার করেছে মিয়ানমার

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১৭:২২

সাহস ডেস্ক

মর্যাদা অবস্থান নির্বিশেষে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকটে বিষয়টি আবারও প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন।

মঙ্গলবার (২২ মে) নিরাপত্তা পরিষদে সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা বিষয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক চলাকালে এসব কথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

বক্তৃতায় তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাসী একটি নির্যাতিত সংখ্যালঘু জাতিকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হতে দেখেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তারা চরমপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এমনকি যদি তাদের দাবি মেনেও নেই, তাহলেও সংশ্লিষ্ট দেশটি নিজ সীমানার মধ্যে থাকা সব বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা বা অনিচ্ছা দেখিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সবশেষ রোহিঙ্গা মানবিক সংকট আমাদের দেখিয়েছে যে সংশ্লিষ্ট দেশটি মর্যাদা, অবস্থান নির্বিশেষে বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।

গত বছর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থা বা আঞ্চলিক অংশীদারদের তত্ত্বাবধানে সেফ জোন তৈরির আহ্বান জানান। এবং এ ধরনের রক্ষাকবচ না থাকলে জোর করে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকবেন। এছাড়া তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্যও এটা প্রয়োজন।

রাখাইনদের বর্তমান পরিস্থিতিতেও মানবিক সহায়তা প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে। এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এমন নৃশংস অপরাধের কোনও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

লিচটেনস্টেইনের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ওয়েনাবেসার বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নৃশংসতার সবচেয়ে ভয়ংকর উদাহরণগুলোর মধ্যেই আছে। এসময় তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরকে তিনি স্বাগত জানান। তবে সফর শেষে পরিষদের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

ওয়েনাবেসার আরও বলেন, চলমান সংকটের দায়িত্বশীলতার মাত্রা নিয়ে কাউন্সিল ঘোষণা দেবে এমন লক্ষণ কমই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, শুধুমাত্র ৭-১৪ মের মধ্যেই বাংলাদেশে থাকা ৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঝড় অথবা ভূমিধসের কবলে পড়েছে। সাধারণত বর্ষকালে কক্সবাজারে প্রায় আড়াই মিটার বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে ব্যাপক বন্যাও দেখা দেয়। তাই দেড় থেকে দুই লাখ শরণার্থী ও ৮৮৩টি সম্প্রদায়ের ঘর, বাড়ি বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার শরণার্থী মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।

সাহস২৪.কম/তানভীর/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত