আজ একুশে আগস্ট, রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক আখ্যান

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২১, ০১:২৮

সাহস ডেস্ক

আজ বিভীষিকাময় একুশে আগস্ট। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কালিমালিপ্ত দিন। ২০০৪ সালের বিএনপি-জামায়াত আমলের এই দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে 'সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী' সমাবেশে আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। ওই দিন মূহুর্তেই একের পর এক গ্রেনেড হামলায় অকল্পনীয় এক নারকীয় ঘটনা জন্ম দেয় দেশে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের। আজ সেই লাশ-ক্ষতবিক্ষত শরীর আর রক্ত স্রোতের হামলার ১৭ বছর।

শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ শনিবার (২১ আগস্ট) ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী পালন করবে দেশের শোকাহত জনগণ।

২০০৪ সালের ওই দিনে নেতাকর্মীদের মানববর্মে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হতাহত শরীর আর জমিনে লেপ্টে থাকা রক্তের দাগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে উঠে কারবালার প্রান্তর। শহীদ হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী। অথচ আলামত ধ্বংস করে একের পর এক খুনিকে পালাতে সুযোগ করে দেয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

হামলার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে মতিঝিল থানায়। থানা পুলিশ আর ডিবির হাত ঘুরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পরে সিআইডির হাতে। প্রমাণ করার চেষ্টা চলে এ হামলার দায় খোদ আওয়ামী লীগেরই। গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে। ১ মাস ১০ দিনের মাথায় এই কমিশন ১৬২ পৃষ্ঠার একটি ফরমায়েশি রিপোর্ট জমা দেয় সরকারের কাছে। এরপর নানান নাটকীয়তায় শুরু হয় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপকৌশল প্রয়োগ। তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নিতে আটক করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলে শৈবাল সাহা পার্থ নামের এক তরুণকে। মঞ্চে তোলা হয় জজ মিয়া উপাখ্যান। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগে আটক করা হয় জজ মিয়াকে। আটকের পর আদায় করা হয় জোর পূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। স্ক্রিপ্টিং ভুলের কারনে এক সময় প্রকাশ্য হয়, অবসান হয় জজ মিয়া নাটক অধ্যায়ের। তার সঙ্গে থেমে যায় তদন্ত কাজ।

বছর চারেক পর ২০০৮ সালের ১১ জুন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হত্যার অভিযোগ ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। নাম আসে জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনের। অভিযোগ গঠন করে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর বিচারও শুরু হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপক্ষের অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। বিশেষ তদন্তে বেরিয়ে আসে গ্রেনেড হামলার ঘটনার মূল হোতাদের নাম। আসামির তালিকায় চলে আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের নাম। তারেকসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়েই শুরু হয় বিচারিক কার্যক্রম। বিচার কাজ চলাকালীন সময়েই অনন্যা মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল, মানবতাবিরোধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের ফাঁসি কার্যকর হয়।

সর্বশেষে  মামলার রায় হয় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মামলার আসামি সাবেক পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১১ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়  বিভিন্ন মেয়াদে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জন কারাগারে, ১৪ জন পলাতক আর জামিনে আছেন আরও ৯ জন।

গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) সেই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে ফেরা নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতৃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে আগস্ট উপলক্ষে এক বাণীতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, সকল আইনি বিধি-বিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় কার্যকর হবে। এই রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হবে।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত