এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় নোয়াখালী

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৩

সাহস ডেস্ক

আজ ৭ ডিসেম্বর, নোয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল নোয়াখালী জেলা।

পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা পুলিশ ও ইপিআর ফেরৎ জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তী সময়ে পাকবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় হানাদাররা।

নোয়াখালী পিটিআই স্কুল এবং বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি গাড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের সঙ্গে এদেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে এসে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এতে শহীদ হন শত-শত মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে পাকবাহিনী হত্যা করেছিলো শতাধিক ব্যক্তিকে।

ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে  মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের পিছু হটিয়ে দেয়। ৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ ডিসেম্বর প্রত্যুষে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের নেতৃত্বে জেলা শহর মাইজদী আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। অবস্থা বেগতিক দেখে পিটিআই স্কুলের ট্রেনিং সেন্টার থেকে দ্রুত  পালিয়ে যায় পাক সেনারা।

মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মিলন জানান, ২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় একমাস নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে নেয়।

দখলদার বাহিনী জেলা শহরের শ্রীপুর ও বেগমগঞ্জের গোপালপুরে হামলা চালিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা, বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এরপর দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পানীগঞ্জের বামনী, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন শত শত মুক্তিযোদ্ধা। এদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে।  এ সময় বিপরীত দিক থেকে গুলি বন্ধ হলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ১০-১২ জন রাজাকারের লাশ পড়ে আছে। আরো কয়েকজন রাজাকার ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এভাবে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় নোয়াখালী জেলা।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, গণকবরগুলি আজও সংরক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে মাইজদি পিটিআই হানাদারদের ক্যাম্পে অত্যাচার ও গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামীদের হত্যার পর জেনারেল হাসপাতালের পিছনে গর্ত করে পুতে ফেলত, তাদের কবরগুলি সংরক্ষিত হয়নি। 

নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে ৭ ডিসেম্বর দিনটি পালন করবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিজয়মেলা কমিটি, সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট। এ উপলক্ষে মাইজদি পিটিআই সংলগ্ন মঞ্চে আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধের গান ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত