সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার রায় আজ

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০৪

সাহস ডেস্ক

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর এবিপিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি)মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) দেশের বহুল আলোচিত এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই তারিখ নির্ধারণ করেন কক্সবাজার আদালত। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈল আজ এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

আলোচিত এই মামলায় বাদী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। এর মধ্যে প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্য দেন। দ্বিতীয় দফায় চার দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় চারজনের, তৃতীয় দফায় তিন দিনে আটজনের, চতুর্থ দফায় দুই দিনে ছয়জনের, পঞ্চম দফায় তিন দিনে ১৫ জনের, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪ জনের, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচজনের এবং অষ্টম দফায় তিন দিনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামের সাক্ষ্য দিয়ে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়। এরপর আদালত নবম দফায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ১৫ জন আসামির ৩৪২ ধারায় লিখিত ও মৌখিক সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ আদালত ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি চার দিনের উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ ৩১ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলামসহ ৬৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী  ও তদন্ত কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে আদালতকে জানান। এ মামলার বাইরেও সাক্ষীরা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দায়িত্ব পালনকালে টেকনাফে নানা নির্যাতনের বর্ণনা দেন আদালতে। সেদিনের নির্মম ঘটনা সাক্ষীরা সবিস্তারে আদালতে তুলে ধরেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, আদালতে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য এভিডেন্স তথ্য-প্রমাণে প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পেরেছে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেজর সিনহাকে হত্যা করেছেন। তাই আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত