জ্যৈষ্ঠের খরতাপে বৃষ্টির প্রার্থনায় তৃষিত মানুষ

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন তৃষিত মানুষ

সারাদেশে চলছে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ। সূর্যের প্রখর উত্তাপে দেশের উত্তরাঞ্চলের দুটি জেলায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাগামছাড়া লোডশেডিং। দুই মিলে বেহাল দশা মানুষের। গ্রামের মানুষেরা বিদ্যুতের সুবিধা কম পাচ্ছেন। গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন অনেকে।

এদিকে মে মাসে গত বছরের তুলনায় বৃষ্টি হয়েছে কম। চলতি জুন মাসেও বৃষ্টি মাসের মধ্যবর্তী সময়ে বলে আভাস দিয়েছে আবহওয়া অফিস। অন্যদিকে সরকারের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমায় প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি ফেলছেন মানুষ। সব মিলে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন তৃষিত মানুষ।

ঢাকায় এখন লোডশেডিং হচ্ছে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে। কোথাও কোথাও ৮ ঘণ্টা লোডশেডিংও হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদনে ঘাটতি থাকছে তিন হাজার মেগাওয়াট। মধ্যরাতে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও সেই তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।  

এদিকে, দিনাজপুরে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে বৃষ্টির আশায় সোমবার বিশেষ নামাজ সালাতুল ইস্তিকোর আদায় করেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।  সকাল ৮ টার দিকে দিনাজপুর সদরের চেহেলগাজী মাজার সংলগ্ন ঈদগা মাঠে এই নামাজে প্রায় ২ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।  

তীব্র দাবদাহের মুর্হুতে বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তিসকা) আদায় করা হয়েছে রাজধানীতে। সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় রাজধানীর আফতাবনগর এল ব্লক খেলার মাঠে নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে, দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি আশায় সালাত আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

একই সময়ে তীব্র দাবহাহে ঢাকায় এখন লোডশেডিং হচ্ছে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। কোথাও কোথাও ৮ ঘণ্টা লোডশেডিংও হচ্ছে।

বিতরণ কোম্পানি ডেসকো ও ডিপিডিসির তথ্যমতে, রোববার ডেসকোর চাহিদা ছিল এক হাজার ৩৮৬ মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট, লোডশেডিং করা হয়েছে ২৫০ মেগাওয়াট। অপরদিকে ডিপিডিসির বিতরণ অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২ হাজার মেগাওয়াট, সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট, লোডশেড করা হয়েছে ৩৩০ মেগাওয়াট।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, রোববার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৯০৫ মেগাওয়াট। মোট লোডশেডিং করা হয়েছে ২ হাজার ৩৯৫ মেগাওয়াট। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে, কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও সোমবার দুপুরে থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। এর ফলে লোডশেডিং আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি লোডশেডিং কমিয়ে আনার। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়েছি, যাতে ঘাটতি কমিয়ে আনা যায়।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা এখন নির্ভর করছেন বৃষ্টির ওপরে। তাপমাত্রা কমলে চাহিদার পরিমাণও কমে যাবে, একইসাথে কমবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণও। তবে এক্ষেত্রে সুখবর দিচ্ছে না আবহাওয়া অধিদপ্তরও। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সহসাই তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার জানিয়েছে, অস্বস্তিকর এই গরম আরও পাঁচ-ছয়দিন থাকবে। 

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা পারভেজ আহমেদ বলেন, এমনিতে গরম, তার ওপর লোডশেডিংয়ে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। একটু পর পর উঠে বাতাস করেছি।

মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় বসবাস করেন আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, সারাদিন কোনোভাবে পার হলেও রাতে কষ্টটা বেশি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিছানায় আর শুয়ে থাকা যায় না, উঠে পড়তে হয়।

কল্যাণপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, রাতে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় বৃদ্ধ বাবা- মা আর ছোট বাচ্চারা। 

লোডশেডিংয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও দু’সপ্তাহ থাকবে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আরও দুই সপ্তাহ এ অবস্থা থাকতে পারে। আমরা আশা করছি আগামী দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। 

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাপমাত্রা যেহেতু ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বেড়ে গেছে সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। পাওয়ার প্লান্টে যে পরিমাণ মজুত ছিল সেটা দিয়েও আমরা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে প্রস্তুত ছিলাম। এই মুহূর্তে আমরা শিডিউল লোডশেডিংয়ে যাচ্ছি না। তবে কিছু কিছু এলাকায় লোডশেডিং হবে।

গ্রামাঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ পাওয়াই যায় না। এ অবস্থায় দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামের মানুষের।

সব মিলে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন তৃষিত মানুষ।