বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৫

সাহস প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশবাসী তাদের পক্ষে রয়েছেন, কাজেই তার সরকারের পতন ঘটানো এবং দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেয়া সম্ভব হবে না। 
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন দেখছে। তারা কীভাবে ভুলে যায় যে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে। যার জন্য জনগণ তাদের বারবার ভোট দেন।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ পালন উপলক্ষ্যে গতকাল সোমবার তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি রমজান মাসে গরিব মানুষের মধ্যে ইফতারি বিতরণ না করে সরকারের সমালোচনা করে। নিজেরা ইফতারি খায়, আর আওয়ামী লীগের গিবত গায়। আর কবে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করবে, সেটাই দেখে। 
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং এর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ইফতার পার্টি না করে সারা দেশে গরিবদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করছেন। দেশবাসীও আওয়ামী লীগকে বারবার সমর্থন করেছেন। কারণ, তারা তাদের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে সব সময় পাশে পেয়েছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, এই রমজান মাসে আমি সবাইকে বলব, আপনাদের আশপাশে যারা দরিদ্র সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের সহযোগিতা করুন। আমরা যেমন ইফতারি বণ্টন করছি, তাদের সহযোগিতা করছি, আপনাদেরও সেটা করতে হবে।
সংযমের এই মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে মূল্যস্ফীতিতে দেশের সাধারণ জনগণের পাশে না দাঁড়ানোয় বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ইফতার পার্টি করে করুক, কিন্তু আপনারা দেখাবেন যে মানুষের পাশে আছেন। আর এই কারণেই তো মানুষ আমাদের ভোট দেন। বাংলাদেশের মানুষ যে বারবার আমাদের ভোট দেন, সেটা তো এই কারণেই।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন এই দাবির পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, তারা কোন সাহসে সেটা চায়? কারণ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারই ছিল। খালেদা জিয়াও সুস্থ ছিলেন, যদিও রাজনীতি করবে না বলে তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে হাওয়া ভবনের খাওয়া খেয়ে লন্ডনে তো তখন তারও রমরমা অবস্থা। কিন্তু সে সময়েও তারা আসন পেয়েছিল ৩০টি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি আসন। এটাও তো তাদের মনে রাখা উচিত। কাজেই কিসের আশায় তারা চায়, বুঝতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের গরিবের পেটে ভাত থাকে, গরিবের মাথা গোজার ঠাঁই হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবেন না, এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন যে থাকবে না, আমরা সেটারই বাস্তবায়ন ঘটিয়ে যাচ্ছি, আর সেটাই ওদের সহ্য হয় না। সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ ভালো থাকলে সেটা তাদের পছন্দ হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই তারা যা চায়, সেটা ইলেকশনের জন্য নয়, বাংলাদেশকে আবার অন্ধকার যুগে ঠেলে দেওয়ার জন্য। কাজেই এই দেশকে আর কখনো অন্ধকার যুগে ফেলে দিতে পারবে না। কারণ, এটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ। মুজিব জন্মগ্রহণ করেছেন এই দেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আর তার আদর্শ ধারণ করেই আমরা সেটা করে যাব, ইনশাআল্লাহ।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে একুশে পদক বিজয়ী আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে কিছু লাইন এবং বিশিষ্ট কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও শেখ বজলুর রহমানও আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং দলের উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে রাস্তাঘাটে হাড্ডি-কঙ্কালসার মানুষ দেখা যেত; কিন্তু আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরে টানা চার মেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগে এখন আর সে অবস্থা নেই। যেখানে মানুষের পরিধেয় বস্ত্রের ঠিক ছিল না, সেখানে এখন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সব ধরনের মৌলিক এবং নাগরিক সুবিধাগুলো তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে মানুষকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। কাজেই আমরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করি এবং সেই ভাগ্য পরিবর্তন একেবারে গ্রামপর্যায়ের মানুষ পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, ধনদৌলত ও সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। কাজেই এর জন্য মারামারি কাটাকাটি কেন? এগুলো তো ফেলে রেখেই চলে যেতে হয়। কাজেই এগুলো যতটা মানুষকে দিয়ে দেয়া যায় এবং মানুষের কল্যাণ করা যায়, সেটুকুই সঙ্গে থাকে। এটাই সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত