এমারেল্ড ওয়েলের সম্পত্তি নিলামে বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ১১:০০

শাহীনুর ইসলাম
ফাইল ছবি

এমারেল্ড ওয়েল লিমিটেডের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির নিলাম আহ্বান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। পুরনো মালিকদের সব মিলে ১৪০ কোটি টাকার দায়ে নিলামের বিজ্ঞাপনটি গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে। 

এদিকে, ঋণ মওকুফ এবং দেনা পরিশোধ সম্পর্কে ব্যাংকের সঙ্গে দুই দফা আলোচনা করেছে ওয়েল কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকবে এবং ঋণের সুরাহা আসতে আরো একটু সময় লাগবে। তাই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান  জানিয়েছেন এমারেল্ড ওয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন।

নিলামের বিজ্ঞাপন অনুসারে আগামী ১৬ আগস্ট কোম্পানিটির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলবে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাপানের একটি কোম্পানির সঙ্গে তেল রফতানির চুক্তি করে তেল কোম্পানিটি। নতুন করে নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে গত সপ্তাহে জাপানিজ কোম্পানি বি-বর্ন কোং লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এমারেল্ড ওয়েল বছরে তিন হাজার টন অপরিশোধিত তেল রফতানি করবে। এমারেল্ড ওয়েলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন, কোম্পানির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এবং বি বর্ন কোং-এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শিঙ্গো মিয়াউচি।  

এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন সম্পদের নিলামের আহ্বান সম্পর্কে দৈনিক সাহসকে বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে আমরা দুদিন বসেছি। তারা বাস্তবসম্মত চিন্তা করছে। আর আজকের নিলামের যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, তা আদালতের নির্দেশ হয়েছে, যা বিধিবদ্ধ নিয়ম।

ঋণ মওকুফ এবং দেনা পরিশোধ সম্পর্কে ব্যাংকের সঙ্গে দুদফা আলোচনা করা হয়েছে। তবে সুরাহা আসতে আরো একটু সময় লাগবে বলেন তিনি। তবে বিনিয়োগকারীদের নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় সুরাহা সম্পর্কে আফজাল হোসেন বলেন, বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে দু’দফা আলোচনা হয়েছে। তাদের প্রিন্সিপাল মানি ৭৪ কোটি পরিশোধ করতে হবে। তারা বাস্তবসম্মত চিন্তা করছে। আর আজকের নিলামের যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, তা আদালতের নির্দেশ, বিধিবদ্ধ নিয়ম।

টেলিফোনে তিনি বলেন, সব জেনেই আমাদের চেষ্টায় আমরা ফ্যাক্টরি চালু করেছি। পাঁচ বছর বন্ধ থাকা ফ্যাক্টরিতে এখন উৎপাদন হচ্ছে জাপানের সঙ্গে তেল রফতানির চুক্তিও করেছি, এটা নিয়ে কেউ সাধুবাদ দিলো না। বরং অর্থঋণ আদালতে চলমান মামলায় আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাই নিয়ে যত কথা। তবে চালু যখন করেছি শেষ পর্যন্ত টিকেও থাকব, ইনশাআল্লাহ।

এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, প্রিন্সিপাল মানি ৭৪ কোটি পরিশোধ করতে হবে। আমরাও সম্মত হয়েছি কিন্তু আদালতে যে মামলা চলমান রয়েছে তাকে হঠাৎ করে থামিয়ে দেয়া যায় না। বিধিবদ্ধ নিয়মে বেসিক ব্যাংকের আবেদনে সমঝোতার কথা জানিয়ে তা বন্ধ করতে হবে। তবে বিনিয়োগকারী নিরাশ হবেন না। শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতে যাব, বলেন আফাজাল হোসেন।

২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মেনোরির সম্পদ নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিলামে তোলার অংশ হিসাবে আদালতের নির্দেশে গত ১৭ জুলাই কোম্পানির ফ্যাক্টরি এলাকায় ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর সম্পদ নিলামের বিষয়ে চলতি সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বেসিক ব্যাংক।

এমারেল্ড অয়েলের পুরনো মালিকরা বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বিদেশ চলে যান। খেলাপি ঋণ আদায়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিবসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
২০২১ সালে জাপানিজ কোম্পানি মিনোরি কোং লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ, ৪০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে কোম্পানিটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন পায়।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গালিবসহ পুরনো মালিকপক্ষ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় পরে দেশের প্রথম বৃহৎ রাইস ব্র্যান অয়েল ‘স্পন্দন’ এর উৎপাদক বন্ধ হয়। পাঁচ বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পরে নতুন পরিচালকরা কোম্পানির ফের উৎপাদন চালু করে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত