আসছে ভিন্ন ধারার ‘ডিজি টেন ব্যাংক’

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৩৪

শাহীনুর ইসলাম
দেশে প্রথম সম্মিলিতভাবে ১০টি ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এবং পরিচালনা যৌথভাবে করবেন তারা। বাংলাদেশে ব্যাংকে প্রস্তাবিত এই ডিজিটাল ব্যাংকের নামকরণ করা হয়েছে- ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি।’ 
 
নুতন ধারার এই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হতে ইতোমধ্যে বীমা, ওষুধ ও পর্যটন খাতের আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা ‘ডিজি ১০ ব্যাংক’ -এ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বীমা কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ‘প্রগতি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেড ‘কোরি ডিজিটাল পিএলসি’ নামে আলাদা দুটি ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানি দুটির সঙ্গে সমন্বিত জোটে কারা রয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। 
 
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি লেনদেন আরো সহজ করা অর্থাৎ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গঠন ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য। শিগগিরই ভিন্নমাত্রার এই ব্যাংক আলোর মুখ দেখবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ।
 
ভিন্নমাত্রার ‘ডিজি টেন ব্যাংক’ উদ্যোক্তা হতে হলে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে ১০ ব্যাংকের প্রতিটি প্রায় ১৪ কোটি টাকা করে মোট ১২৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেবে।
 
কনসোর্টিয়াম বা সম্মিলিত ধারার বাইরে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে ৫১ শতাংশের মালিকানা হবে ব্র্যাক ব্যাংকের। বিকাশ মিলিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত ১১টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানায়। দীর্ঘমেয়াদি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এই প্রথম।
 
প্রাথমিক পর্যায়ে নয়টি ব্যাংকের সঙ্গে জোট বা কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেÑ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি) ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। 
 
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জুনে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে অনুযায়ী ১ আগস্ট শেষ দিনেও কোনো আবেদন জমা না পড়ায় আরো ১৬ দিন বাড়িয়ে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্বিতীয় বার সময় বৃদ্বিতে ১০ ব্যাংকের এমন উদ্যোগের কথা জানা গেল।
 
তবে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের ১২৫ কোটি টাকা ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকার কথা বলা হয়, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
 
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসব ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শিগগিরই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
 
ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ব্যাংকগুলোর একাধিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে ডিএসইর মাধ্যমে পিএসআই প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে।
 
প্রস্তাবিত ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’তে মালিকানায় অংশ নেয়ার কথা জানিয়ে বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাহসকে বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমটিবি। শিগগিরই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ করে বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেয়া হবে।
 
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সর্বশেষ সংশোধনী (২০২৩)-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্য বা প্রতিষ্ঠান, একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ক্রয় করতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানার বেলায়ও ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রযোজ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের ৫ শতাংশের বেশি মালিকানা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
 
এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, আমাদের কনসোর্টিয়ামের অন্য ব্যাংকগুলোর নাম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোই জানাবে। আমি শুধু বলতে পারি যে আমরা দেশ সেরা কয়েকটি ব্যাংক মিলে এই কনসোর্টিয়াম গঠন করেছি। আমাদের সম্মিলিত গ্রাহকসংখ্যা এখনই প্রায় ৫ কোটি। আমরা যারা এ উদ্যোগে একত্র হয়েছি, তারা সবাই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় অনেক এগিয়ে রয়েছি।
 
মাসরুর আরেফিন আরো বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়েরও একটা পরবর্তী পর্যায় বলে কথা আছে। এই যুগে ও সময়ে সেই পরবর্তী পর্যায়টা নিঃসন্দেহে ডিজিটালি সব সেবা দেওয়ার পর্যায়। 
 
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, আমরা এ ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরাও এ উদ্যোগের সঙ্গে থাকব। কনসোর্টিয়ামে থাকা প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের বিষয়টি পর্ষদ সভায় অনুমোদনের কথা রয়েছে।
 
কনসোর্টিয়ামের বাইরেও ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এ বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে ৫১ শতাংশের মালিকানা হবে ব্র্যাক ব্যাংকের। দশ ব্যাংক মিলে দীর্ঘমেয়াদি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি লেনদেন আরো সহজ করতে বেসরকারি খাতের দশটি ব্যাংক মিলে একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছে।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত