উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

দুর্ভাগা চেলসি, বেনজেমায় সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১৬:১৮

সাহস ডেস্ক
জয়ের পর রিয়াল বাহিনীর উৎসব। ছবি: রয়টাস

প্রথম লেগে চেলসির মাঠে অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফরাসি তারকা করিম বেনজেমা। সে ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের মাঠে এসে সে গোল শোধ করে এগিয়েও ছিল চেলসি। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রদ্রিগোর গোলে সমতা নিয়ে শেষ করে স্প্যানিশ ক্লাবটি। এরপর অতিরিক্ত সময়ে ছয় মিনিটের সময় বেনজেমার গোলে চলতি আসরে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেলো রিয়াল মাদ্রিদ।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বার্নাবুতে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগে চেলসির বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরেছে রিয়াল। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের জয় নিয়ে সেমিতে পৌঁছে গেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। রিয়ালের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে গতবারের ইউরোপজয়ী চেলসি। এই ইংলিশ ক্লাবটিকে চেলসিকে হারিয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল হারের একটা বদলাও নিল রিয়াল।

এদিন প্রথম বারের মতো রিয়ালের মাঠ বার্নাব্যুতে খেলতে নেমেছিল চেলসি। আর প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়ে ছিল তারা। মেসন মাউন্ট, আন্তোনিও রুডিগার আর টিমো ভেরনারের গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল টমাস টুখেলের দল। দুই লেগ মিলিয়ে চেলসি তখন ৪-৩ গোলে এগিয়ে। এরপরই বেনজেমা-মদরিচদের পুনরুত্থান। ড্রেসিংরুমে ঠাট্টা করে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রদ্রিগো মদরিচকে বাবা ডাকেন, কারণ মদরিচের বয়স রদ্রিগোর বাবার সমান। সে হিসেবে রদ্রিগো মদরিচের ‘ছেলে’-ই। সেই পাতানো ‘ছেলে’কে দিয়ে গোল করিয়ে রিয়ালের নিবু নিবু আশাটা আরেকটু উজ্জ্বল করে তোলেন এই মদরিচ। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে করিম বেনজেমার গোলেই নিশ্চিত হয় সেমিফাইনাল, প্রত্যাবর্তনের গল্পটা পূর্ণতা পেল না চেলসি। দলের ফরোয়ার্ডদের একের পর মিসে মাথা নত করে মাঠ ছাড়তে হয় দলটিকে।

অথচ পুরো ম্যাচে ৫৬ শতাংশ বলের দখল রেখে ২৮টি শট নিয়েছিল চেলসি। যার মধ্যে মাত্র ৭টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। অন্যদিকে ১০টি শটের ৪টি লক্ষ্যে রেখে ২টি গোল আদায় করে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।

এদিন দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের মাঠে ম্যাচের ১৫তম মিনিটেই এগিয়ে যায় চেলসি। মাঝ মাঠ থেকে সতীর্থের পাস পেয়ে টিম ভের্নারের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান রুবেন লফটাস-চেক। ওয়ান টাচে ডি-বক্সে মেসন মাউন্টের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান এ জার্মান ফরোয়ার্ড। ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শটে বল জালে জড়ান মাউন্ট। এগিয়ে গেলেও দুই লেগ মিলিয়ে এক গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে সফরকারীরা। পরে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে এই এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় চেলসি।

জয়ের আশা জাগিয়েও হেরে গেলো চেলসি। ছবি: রয়র্টাস

বিরতি থেকে ফিরে এসে ব্যবধান দ্বিগুণ করে চেলসি। ম্যাচের ৫১তম মিনিটে মাউন্টের নেওয়া কর্নার কিক থেকে অসাধারণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন রুডিগার। তবে এ ক্ষেত্রে নিজেদের কিছুটা ভাগ্যবান বলতেই পারেন সফরকারীরা। রিস জেমসের নেওয়া শট রিয়ালের কোনো খেলোয়াড়দের গায়ে না লেগে বাইরে গেলেও কর্নারের বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। সেই কর্নার থেকেই গোল আদায় করে নেয় চেলসি। এতে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে সমতায় ফেরে টমাস টুখেলের দল। এ সময় রিয়ালের থেকে চেলসিকেই বেশ উজ্জ্বল দেখিয়েছিল।

আবারো প্রায় ধাক্কা খেয়ে বসেছিল রিয়াল। ম্যাচের ৬২ মিনিটে রিয়াল সমর্থকদের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়েই দিয়েছিলেন চেলসির লেফট উইংব্যাক মার্কোস আলোনসো। কান্তের পাস থেকে ডি-বস্কের ভিতরে থাকা আলোনসো অসাধারণ একটি গোল করেছিলেন। কিন্তু তার গোলটা বাতিল হয় হ্যান্ডবলের কারণে। তার প্রথম নেওয়া শট নাচোর গায়ে লেগে ফিরে আসার সময় হাতে লাগলে, দ্বিতীয় শটে গোল হয়। কিন্তু ভিএআরে যাচাইয়ের পর গোলটি বাতিল হয়।

চেলসির গোল বাতিল হওয়ার পর রিয়াল যেন নি:শ্বাস ফেলল। এরপরই বেনজেমার নৈপুন্যে রিয়াল এগিয়ে যেতে পারত কিন্তু বেনজেমার শট পোস্টে লাগে। তবে ৭৫ মিনিটে ঠিকই বার্নাব্যু স্তব্ধ করে দেন জার্মান ফরোয়ার্ড টিমো ভেরনার। আলনসোর কাছ থেকে বল পেয়ে ভেরনার উদ্দেশ্যে বল বাড়ান কোকাভিচ। বল ধরে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন জার্মান এ তারকা। এতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থাকে চেলসি।

তবে এই অগ্রগামিতা অবশ্য বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারেনি ব্লুজরা। ওই গোলের ঠিক ৫ মিনিট পরে একটি গোল শোধ করে রিয়াল। এতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলে সমতায় ফেরে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে মদরিজের অসাধারণ এক পাস পেয়ে দারুণ ফিনিশিং করেন রদ্রিগোর। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর কোনো গোল না হলে এই সমতা নিয়ে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জয়সূচক গোলটি করলেন করিম বেনজেমা। ছবি: সংগৃহীত

পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা শুরু হয়। প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করা বেনজেমা ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠলেন। ত্রাতা হয়ে টেনে তুললেন রিয়ালকে। ম্যাচের ৯৬তম মিনিটে নিখুঁত ক্রস দিলেন ভিনিসিয়ুস। একেবারে ফাঁকায় থাকা বেনজেমা হেডে বল জালে জড়িয়ে বার্নাব্যুকে উচ্ছাসে মাতান। অথচ বার্নাব্যুকে উদ্বেল করবেন দেখেই যেন গোটা ম্যাচে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে আর নিজে গোল করে প্রায় নায়ক বনে যাওয়া রুডিগার ঠিক ওই সময়টাতেই নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেন না, পা ফসকে একটু পড়ে গেলেন। আর সে সময়ে দেখালেন বেনজেমার কারিশমা। দুই লেগ মিলিয়ে দলকে এগিয়ে দিলেন ৫-৪ গোলের ব্যবধানে। সে ব্যবধান আর ঘোচাতে পারল না চেলসি। রিয়ালও পাড়ি জমাল সেমিফাইনালে। বিদায় নিতে হলো ইংলিশ ক্লাবটিকে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত