আরজ আলী মাতুব্বর

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৫৪

সাহস ডেস্ক

স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ লেখক এবং সত্যের সন্ধ্যানে লৌকিক দর্শন প্রখ্যাত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৩০৭ সনের ৩ পৌষ বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামছড়ি গ্রামে গরীব কৃষক পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন।

তার প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন।

গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করেন, যেখানে শুধুই কোরান ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের ওপর শিক্ষা দেয়া হত। তিনি নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন।

তার বাবার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। বারো বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান। এর পরে পারিবারিক ভাবে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে গেলে স্কুলে পড়ার সুযোগ পান নি তিনি।

আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

শৈশবে তার মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি তোলার দায়ে গ্রামের মানুষ তার মায়ের জানাজা পরতে রাজি হয় নি। শেষে বাড়ির কয়েকজন লোক মিলে তার মায়ের জানাজা শেষে দাফন করেন। এই ঘটনা আরজ আলীর ধর্মীয় মৌলবাদ ও কুসংস্কার বিরোধিতার এবং সত্যানুসন্ধিৎসু হয়ে উঠার পেছনে কাজ করেছিল।

ধর্ম, জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তার প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

১৫ মার্চ ১৯৮৫ সাল (বাংলা সনের ১ চৈত্র ১৩৯২) তিনি ৮৬ বছর বয়সে বরিশাল শের-ই-বাংলা টিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন।

স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের লেখায় উঠে এসেছে জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা। আরজ আলী মাতুব্বরের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ, ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০), সত্যের সন্ধানে (১৯৭৩), সৃষ্টি রহস্য (১৯৭৮), স্মরনিকা (১৯৮২), অনুমান (১৯৮৩), মুক্তমন (১৯৮৮)। মাতুব্বরকে তার বইগুলো প্রকাশে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছিলো।

এক সময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তার মনে প্রশ্ন জাগায় তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে নিজের বাড়িতে “আরজ মঞ্জিল” পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করেন।

স্ব-শিক্ষিত মানুষ হয়েও সর্বত্র বইয়ের আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের ১১৭ তম জন্মবার্ষিকীতে সাহস২৪ এর পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
সাহস২৪.কম/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত