সুকুমার রায়

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৪৬

সাহস ডেস্ক

বাংলা শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম সুকুমার রায়। তিনি ভারতীয় সাহিত্যে ‘ননসেন্স রাইম’র প্রবর্তক। তার লেখা কবিতার বই ‘আবোল তাবোল’, গল্প ‘হযবরল’, ‘পাগলা দাশু’ বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্য। জনপ্রিয় এ লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার ১৯২৩ সালের এ দিনে (১০ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় মারা যান।

সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের উজ্জ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে। মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে।

সুকুমার রায়ের পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যনুরাগী, যা তার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। বাবা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এ ছাড়াও রায় পরিবারের সঙ্গে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুকুমার যুক্ত ছিলেন।

সুকুমার কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বিএসসি (অনার্স) শেষ করার পর মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড যান। কালক্রমে ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। তার আগেই উপেন্দ্রকিশোর উন্নতমানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন এবং ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’ প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। এর পর পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।

তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলো। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপত্র ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নামের পত্রিকা। সেখানেই তার আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মনডে ক্লাব নামে একই ধরনের আরেকটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন সুকুমারের লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে।

ইংলান্ডে থাকাকালে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বিষয়ে কয়েকটি বক্তৃতাও দেন, রবীন্দ্রনাথ তখনও নোবেল পুরস্কার পাননি। ইতোমধ্যে সুকুমার প্রচ্ছদশিল্পীরূপেও সুনাম অর্জন করেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি ও ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক প্রবন্ধ থেকে।
সুকুমার ছিলেন হিন্দু ধর্মভুক্ত ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠীর নেতা। তিনি ‘অতীতের কথা’ নামে একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে। ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শ উপস্থাপনার লক্ষ্যে কাব্যটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়।

সুকুমারের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে— ‘আবোল তাবোল’, ‘পাগলা দাশু’, ‘খাই-খাই’, ‘অবাক জলপান’, ‘হ য ব র ল’, ‘শব্দ কল্প দ্রুম’ ও ‘ভাষার অত্যাচার’।

সুকুমার রায়ের স্ত্রীর নাম সুপ্রভা রায়। তাদের ছেলে সত্যজিৎ রায় ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৮৭ সালে বাবার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন সত্যজিৎ।
সূত্র: উইকিপিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত