‘মামলা হবে, ধরা যাবে না’

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৬, ১১:০০

মেয়েটাকে একটা বখাটে ছেলে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। স্কুল পড়ুয়া মেয়েটার বয়েস কতোই বা হয়েছিলো ১৩ কি ১৪ বছর। অথচ মৃত্যুর আগে তাকে দেখে যেতে হয়েছে পৃথিবীর মানুষজনের নিষ্ঠুরতা।

যেই স্কুলের শিক্ষকদের সে হয়তো আজীবন শ্রদ্ধা করে এসছে, সেই স্কুলের কোন শিক্ষক তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

আজ একজন সাংবাদিক বন্ধুর স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম- “উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের হতভাগ্য স্কুল ছাত্রী রিশা ছুরিকাহত হয় স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে। সেখান থেকে সে রক্তাক্ত অবস্থায় এসে দাঁড়ায় স্কুলের ভেতরে, তখন তার পেটের বাম দিক থেকে রক্ত পড়ছিল। স্কুলের গাড়িটা পাশেই ছিল, কর্তৃপক্ষ তাকে গাড়িটা দেয়নি। কোনো শিক্ষক এগিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় প্রথম কলেজ সেকশনের দুজন শিক্ষার্থী এসে ওর ওড়না খুলে পেটে বেঁধে রক্ত থামার ব্যবস্থা করে, তারা নিয়ে যায় পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে।
ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুতর কেস বলে তারা মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। এই মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে রিকশা করে। পুলিশ কেস হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নাকি বলেছেন- মামলা হবে, ধরা যাবে না।”

মেয়েটির মা’ই এইসব অভিযোগ করেছেন।

আজীবন জেনে এসছি বাবা-মায়ের পরে নাকি শিক্ষকরাই অভিভাবক। অথচ এই অভিভাবকদের সামনে মেয়েটির রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো, তাদের কোন মায়া হলো না। তারা পুলিশ কেস হবে, এই চিন্তায় সামনে এসে দাঁড়ায়নি!

অবশ্য মায়া হবেই বা কেন! স্কুল ব্যস্ত কিভাবে বেতন বাড়িয়ে টাকা ইনকাম করা যায় আর শিক্ষকরা ব্যস্ত কিভাবে প্রাইভেটে পড়িয়ে বাড়তি টাকা আয় করা যায়!

এইতো কোন দিন যেন পত্রিকায় পড়লাম কোন স্কুলের শিক্ষকরা নাকি এক ছাত্রীকে মাত্র ৮০টাকার জন্য এমন অপমান করেছে যে ওই ছাত্রী শেষমেশ আত্মহত্যা করেছে।

এই সমাজে ছাত্র ছাত্রীদের কেউ এখন আর মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না। তাদের বিবেচনা করা হয় কেবল’ই অর্থ উপার্জনের একটা মাধ্যম হিসেবে। তাই তাদের রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়লেই বা কি, কিংবা তারা মরে গেলেই বা কি!

খারাপ লাগছে কেবল এই ভেবে যে- এই মেয়েটা মৃত্যুর আগে পৃথিবীতে তার চেনা পরিচিত মানুষগুলোর নিষ্ঠুরতা দেখে কেবল শারীরিক কষ্ট নয়, মানসিক কষ্ট নিয়ে ওপারে গেল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত