লালমনিরহাটে এক গ্রামে ৭৮ পুষ্টিবাগান

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২১:৫৩

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের আদিতমারীর ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের সাথী আক্তারের বাড়ির আঙিনায় এক সময় আবর্জনার স্তূপ ছিল। সে উঠানে গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান। পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে সেসব সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। 
সাথী পাঁচ শতক জমিতে লালশাক, পালংশাক, শিম ও লাউ আবাদ করেছেন। জমি প্রস্তুত করতে খরচ পড়েছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সার, সবজির বীজ, খেতের বেড়া তৈরির খরচও দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তার আবাদ করা সবজি কীটনাশকমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও প্রচুর। পাইকাররা আগাম টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে যান।
এ গ্রামের সহিদার রহমান আঙিনায় তামাকের চারা তৈরির বেড করতেন। সেই জমিতে এবার লাউ আবাদ করেছেন। চলতি মৌসুমে ৫০০ পিস লাউ বিক্রি করেছেন। 
মরিচবাড়ি গ্রামের বেশিরভাগ জমিতে আগে তামাক আবাদ হতো। বাসাবাড়ির উঠান বা রাস্তার পাশে পতিত থাকত জমি। সেই জমিগুলোতে এখন আবাদ হচ্ছে সবজি। গ্রামের শতাধিক বাড়ির মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫টি বাড়িসহ ৭৮টিতেই পুষ্টিবাগান রয়েছে। এসব বাগানে কীটনাশকমুক্ত  ১৬ জাতের সবজি আবাদ হচ্ছে।
সবজি আবাদে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না এখানকার চাষিরা। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের ওপর জোর দেয়া হয়। কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার হয় জৈব বালাইনাশক (নিমপাতা ও বিষকাঁটালি পাতার রস)। এতে ফলন ভালো হয়। বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় যুবক এরশাদসহ অনেকেই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। লাভবানও হয়েছেন তারা।
এরশাদ জানান, গোবর, কেঁচো ও খড়কুটা দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে এ সার তৈরি হয়ে যায়। ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বিক্রি করছেন। 
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাটে পুষ্টিবাগানের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারি মাসে। ২০২৭ সালে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মরিচবাড়ি গ্রামের ৭৮টি আগ্রহী পরিবারকে এক থেকে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে সার, ১৬ জাতের সবজি বীজ ও ফলের চারা দেওয়া হয় ওইসব পরিবারকে। এ ছাড়া ঔষধি ও মসলাজাতীয় গাছের চারাও বিতরণ করা হয়। পুষ্টি নিরাপত্তা, বিষমুক্ত সবজি আবাদ ও অসচ্ছল পরিবারকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলাই প্রকল্পের লক্ষ্য। কীটনাশকমুক্ত সবজি বাগানের এই মডেল পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, দেশের ৪৯টি জেলার ১৫৫টি উপজেলায় এ প্রকল্প চালু রয়েছে। মরিচবাড়ি গ্রাম সেগুলোর মধ্যে একটি। এ গ্রামের কৃষকরা শতভাগ কীটনাশকমুক্ত সবজি আবাদ করছেন। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত