লক্ষ্মীপুরে স্কুলের সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ২১:৪১

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের এলকেএইচ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের দিয়ে ব্যবসায়ীর জমি দখলচেষ্টার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (রায়পুর) ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া মামলাটি করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, আদালতের বিচারক মো. তৌহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়েছেন। বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থিতিবস্থা রাখার জন্য রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের এল কে এইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। মনির মোল্লা দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামে বিদ্যালয়টির পাশে রাসেলদের (রাসেলসহ শরিকরা) ৩৯ শতাংশ জমি রয়েছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষক মিজানুর রহমান ও সভাপতি মনির মোল্লা ঘটনাস্থল এসে ছাত্রদের নিয়ে জমির কলা, সুপারি ও নারিকেল গাছ কেটে ফেলেন। সয়াবিনসহ বিভিন্ন ফসলও কেটে দেওয়া হয়। তারা রাসেলদের জমিতে ছাত্রদের দিয়ে জোর করে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেন। বাধা দিলে তাদের ধাওয়া করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাস্তার উপরে এই সাইনবোর্ড কত দিন আগের এই প্রশ্নে, রাসেলের মা লুৎফর বেগম বলেন, সাইনবোর্ড টা ৫/৬ মাস আগে লাগানো হয়েছে। যে ইট গুলো ছাত্রদের দিয়ে  রাস্তায় বিছানো হয়েছে, এই ইট গুলো আমার আমি এখানে ঘর করার জন্য এনেছি। এ সময় বাদী রাসেলের স্ত্রী এবং ছোট ভাই উজ্জ্বল উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এল কে এইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট সম্পতি ১ একর ২০ শতাংশ ৭ জন দাতা থেকে দান আর বাকিটা ক্রয় করা, রাসেলদের কেউ এখানে  সম্পতি দান করেনি। এই রাস্তাটি প্রায় ৩০ বছর আগের আমি ১৯৯৮ইং সনে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি তার আগ থেকেই এই রাস্তা ব্যাবহার হচ্ছে আমিও চলাচল করেছি আর স্কুলে যাওয়ার জন্য আর কোন রাস্তাও ছিলো না।

রাসেলের কাছ থেকে টাকা চাওয়া বা টাকা দাবি করার বিষয়ে জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, রাসেল এই স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করে। সে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল মানবন্ধন করে স্কুল কতৃপক্ষ।

২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন স্কুলের রাস্তা সলিং করার জন্য, তখনই এই রাস্তা করা হয়।

ছাত্রদের এই কাজে কেন ব্যাবহার করলেন কেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি কাউকে ডাকিনি রাসেল যখন এই রাস্তা বন্ধকরে ঘর র্নিমান করা শুরু করেছে তখন আমি রাস্তা যাতে বন্ধ না করে তা বলতে গিয়েছি, কিন্তু রাসেল উত্তেজিত হয়ে চিল্লাপাল্লা শুরু করলে স্কুল থেকে ছাত্ররা বেড়িয়ে আসে। এসে দেখে রাসেলের মা ‘দা’ হাতে আমার দিকে তেড়ে আসছে, তখন তারা এই (দা দেখায়) ‘দা’টি কেড়ে নিয়ে ইট গুলো রাস্তায় বিছিয়ে দেয়। আমি অনান্য শিক্ষকদের সহযোগীতায় ছাত্রদের স্কুলে নিয়ে যাই।

স্কুল সভাপতি মনির মোল্লা বলেন, এই রাস্তাটা অনেক আগের। এখানে বাজার ছিলো। আর এই রাস্তা বাজারের গলির রাস্তা। এখানে স্কুলের অনেক পূর্বেই রাস্তাটা ছিলো। রাসেল জায়গাটি ভরাট করে উছু করবে বলে রাস্তার সলিং করা ইটগুলো তুলে ফেলে। পরে আবার বসিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সে দেয়নি, উল্টো ইট নিয়ে এসেছে দোকান ঘর র্নিমাণ করার জন্য।

তিনি বলেন, রাসেল এই জমির মালিক, এইটা ঠিক তবে শুরু থেকেই এইটাই ছিলো স্কুলের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। আমি এবং আমার ভাই এই এলকেএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ৪০ শতাংশ জমি দান করেছি।

এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি বলেন, করোনাকালিন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকার সময় রাসেল জায়গাটি ভরাট করার জন্য সলিং এর ইট উঠিয়ে নেয়, পরে আবার ইট বসিয়ে রাস্তা ঠিক করে দেওয়ার কথা থাকলেও আর দেয়নি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত