পাটলাই নদীতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়লা লুট

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৬

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কয়লার উপর অশুভ চক্রের কালো থাবা যেন কোনো ভাবেই থামছে না। নৌপথে কয়লা লোড-আনলোডের সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়লা চুরির ঘটনায় প্রশাসন সোচ্চার হলে এখন অপরাধের ধরণ পাল্টিয়েছে চক্রের সদস্যরা। শুল্ক স্টেশন ও নৌকা বন্দর এলাকায় কয়লা চুরি বন্ধ হলেও দূরবর্তী পাটলাই নদী পথে এখন ঘটছে কয়লাবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা। রাতের আঁধারে নৌকার মাঝি-শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়লা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর পাটলাই নদীর নৌঘাট এলাকার ব্লু-ওয়াটার নামের এক কয়লাবাহী নৌকায় ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাকাতদের একটি সংঘদ্ধ দল রাতের আঁধারের অস্ত্রের মুখে নৌকা মাঝিকে জিম্মি করে নৌকা থেকে প্রায় ৩০ টন কয়লা লুট করে নিয়ে গেছে। এই ঘটনায় তাহিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী। 

এদিকে ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পাটলাই নদীর হাওর এলাকার নৌকার মাঝি, কয়লা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। ডাকাতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমের এই সময় নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নৌজটের সৃষ্টি হয় পুরো নদীজুড়ে। কয়লাবাহী নৌকা বা বাল্কহেড নৌপথে নিয়ে যাওয়ার সময় আটকা পড়ে অনেক নৌকা। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জটের। ফলে নদী এলাকায় কয়লাবাহী ট্রলারসহ শ্রমিক-মাঝিদের আটকে থাকতে হয় প্রায়দিন। এই সুযোগে রাতের আঁধারে ছোট ছোট ট্রলারে করে এসে আটকে থাকা নৌকার মাঝি ও শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়লা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। নৌকার মাঝি , শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ স্থানীয় না হওয়ায় ডাকাতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।

গত মঙ্গলবার রাতে ২০-২৫ জনের একটি সংঘব্ধ ডাকাত দল সুলেমানপুর উত্তরের পাটলাই নদীর নৌঘাট এলাকায় জটে আটকে থাকায় ব্লু ওয়াটার নামের কয়লাবাহী বাল্কহেডের মাঝি ও শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাতভর কয়লা লুট করে নিয়ে যায়। এই বাল্কহেডে মাসুক এন্টারপ্রাইজের কয়লা ছিল। ডাকাত দল বাল্কহেড থেকে প্রায় ৩০ টন কয়লা লুট করে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ৭ লাখ টাকা।

ব্লু ওয়াটার নৌ পরিবহনের মাঝি লাদেন মিয়া বলেন, গত ৭ দিন ধরে নৌজটের কারণে নৌকা আটকে আছে সুলেমানপুর এলাকায়। এখানে অবস্থান করে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নৌকায় উঠে আমাদের ভয় দেখায় ২০-২৫ জন লোক। আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এসময় ছোট ছোট নৌকায় কয়লা ভরতে শুরু করে। প্রতিবাদ করলে আমার গলায় রামদা ধরে একজন। আমার সহযোগী শ্রমিককে রড দিয়ে কোমরে আঘাত করে। আমরা প্রাণের ভয়ে আর কথা বলিনি। রাতভর কয়লা লুট করেছে তারা। আমরা মুখ খুলতে চাইলে মারধর করে। হত্যার হুমকি দেয়।

মাসুক এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, আমার ট্রলারে ১৬৫ টন কয়লা ছিল। ডাকাতরা আমার নৌকা থেকে প্রায় ৩০ টন কয়লা লুট করেছে। এই কয়লাগুলো ঢাকার ব্যবসায়ীদের দেয়ার কথা। আমি এই ঘটনায় থানায় জিডি করেছি। কয়লাগুলো উদ্ধার না হলে আমি পথে বসে যাব।

রাকিব এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, সুলেমানপুরের পাটলাই নৌপথে ব্যবসায়ীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। নৌজটে নৌকা আটকে থাকলে ফাঁদ তৈরি করে একটি চক্র। রাতের আঁধারে এসে কয়লা লুট করে নিয়ে যায়। আমরা বিষয়টি অনেকবার পুলিশকে বলেছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাহিরপুর থানার ওসি ইফতেখার হোসেন বলেন, কয়লা চুরি বন্ধে পুলিশ শক্ত ভূমিকা নিয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত