বন্যার কবলে বাংলাদেশ

দুঃসময়ে শুকনা খাবারের সংকট, দাম বেশি!

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১

MKL
বন্যার সুযোগে শুকনা খাবারের দাম বাড়ানোয় জরিমানা

বন্যার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের সংগঠন, সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের ব্যাপক চাহিদার কারণে দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

জানা গেছে, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তিন দিন ধরে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, মোমবাতি, ম্যাচ, ওরস্যালাইন, বোতলজাত পানি, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। 

হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি চিড়ার দাম পাইকারি পর্যায়ে ৬-৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মুড়ির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। এক ডজন মোমবাতির দাম ২০ টাকার বেশি বেড়েছে। তারপরও অধিকাংশ দোকানে পণ্যটি মিলছে না।

রাজধানীর কাওরান বাজারে গত দু’দিনে বন্যার্তদের সহায়তায় শুকনা খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দল আসতে দেখা গেছে। এক দল পণ্য কিনে ভ্যান বা পিকআপে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তো আরেক দল পণ্য কিনতে হাজির। কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলায় চিড়া-মুড়ির দোকানে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

৫০০ কেজি মুড়ি আর ৫০০ কেজি চিড়া কিনতে এসেছেন একটি সংগঠনের কর্মীরা। তবে ব্যবসায়ী রমজান আলী ক্রেতাদের বলেন, এখন চিড়া-মুড়ি কোনোটাই নেই। তাদের সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করতে বলেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে ক্রেতাদের চাপ বেশি। গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে সব চিড়া-মুড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না আসায় অনেক ক্রেতাকেই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তারপরও গত তিন দিনে প্রায় ২০ টন চিড়া-মুড়ি বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

চিড়া বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই ট্রেডার্সের সামনে বেশ কয়েকজন ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। ক্রেতারা চিড়া কিনতে চাইলেও দোকানের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলছেন, আপাতত নেই। গাজীপুরের মিল থেকে চিড়ার গাড়ি এলে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, চাহিদা থাকায় মিল মালিকরা চিড়ার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিড়া ৫৬ টাকায় কিনেছেন। এখন ৬২-৬৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতি কেজিতে ২ টাকা খরচ হচ্ছে। সে কারণে চিড়ার কেজি ৬৮-‍৭০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ১০০ কেজি মুড়ি, ১০০ কেজি চিড়াসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে কাওরান বাজারে আসেন। 

দোকানদাররা বলছেন, চিড়া নেই। তবে কর্মচারীদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, গুদামে চিড়া আছে। দাম বেশি নেয়ার জন্য দোকানদাররা বলছেন চিড়া নেই।

কিচেন মার্কেটের দোতলায় বিস্কুট, ওরস্যালাইন, মোমবাতি, ম্যাচ ইত্যাদি পণ্য কিনতে কমবেশি প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। যদিও অধিকাংশ দোকানি মোমবাতি দিতে পারছেন না। একটি দোকানে দেখা গেল মোমবাতি আছে, তবে দাম বেশি।

দোকানিরা বলছেন, দু’একদিন আগেও এক ডজন মোমবাতির দাম ছিল ৭০ টাকা; কিন্তু এখন ৯০ টাকা দিয়েও কোম্পানি থেকে মোমবাতি পাচ্ছি না। মোমবাতি খুবই স্লো আইটেম (কম বিক্রীত পণ্য)। তাই অধিকাংশ দোকানে নেই।

শনিবার পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে অভিযান চালিয়েছে। 

শুকনো এসব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রমাণ মেলায় জরিমানা করা হয় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে।

হঠাৎ বন্যায় ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ ১১ জেলার লাখ লাখ মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী, বিশেষ করে মুড়ি, চিড়া, গুড়সহ অন্য শুকনো খাবারের চাহিদা বেড়েছে। 

এদিকে শনিবার পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে অভিযান চালিয়েছে। 

শুকনো এসব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রমাণ মেলায় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে অধিদপ্তর। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম।

 অভিযানে ২টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত