জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

কামরুদ্দীন আহমদ

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২৩

১.
মননশীল লেখক, স্বনামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব, মহান ভাষাসৈনিক, শ্রমিক নেতা এবং সাবেক কূটনীতিবিদ কামরুদ্দীন আহমদ ।প্রচারের আলোয় তিনি ততটা না আসায় আমাদের অনেকের কাছেই তিনি সুপরিচিত নন। কিন্তু চিন্তাচর্চায় ব্যাপৃতজনের কাছে তিনি নানা ভূমিকার কারণে শ্রদ্ধার আসন দখল করে আছেন। কামরুদ্দীন আহমদদদের মতোন সমাজের প্রকৃত জ্ঞানী-গুণীজনের খবর আমরা রাখতে চাই না বলেই তাদের চিনি না, তাঁদের মতোন আলোকিত মানুষদের চেনাজানার চেষ্টাটা যে ক্রমশ: লোপ পাচ্ছে বলেই দৃশ্যমান। আত্মবিস্মৃতির এই অবস্থার অবনতি ভয়ংকর আগামি দিনের আশংকাই জাগিয়ে তোলে। কম আলোচিত কিন্তু আপন কর্মের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ত্ব কামরুদ্দীন আহমদ মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ষোলঘর গ্রামে ১৯১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আমার প্রিয় এই প্রবল সমাজ সচেতন লেখকের অমর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, কামরুদ্দীন আহমদ ১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন। রাজনীতি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান সত্ত্বেও তিনি লেখক হিসেবেই সমধিক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো নেপথ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি ও বিকাশ লাভ করে, তার একজন অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক ছিলেন তিনি। কামরুদ্দীন আহমদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন আহমেদদেরও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং তাজউদ্দিন আহমেদের ডায়েরিতে তাঁর স্মৃতি, চিন্তনচর্চার কথা বিশেষ গুরুত্বসহকারে বারংবার উল্লেখিত হয়েছে।

২.
আইনজীবী, রাজনীতিক, কূটনীতিক কামরুদ্দীন আহমদ আমার মত অনেকের কাছেই প্রিয় একজন আত্মসচেতন লেখক হিসেবে । সরকার ও রাজনীতির একজন নিত্য অনুসন্ধিৎসু ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে- বাঙালি ও বাংলার সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে আত্মঅনুসন্ধানীজনের, আগ্রহী গবেষকদের জন্য তাঁর প্রতিটি গ্রন্থই এক একটি মূল্যবান আকরগ্রন্থ। তাঁর ‘পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি’, দুই খন্ড ‘বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ’, ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’ কিংবা ‘বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী’। কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি ? ধরা যাক, কামরুদ্দীন আহমদের ‘বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মপ্রকাশ’-এর কথা। আপন ইতিহাসের সঠিক পথ পরিক্রমার দিশা খুঁজে পেতে কামরুদ্দীন আহমদের এই বইটিসহ উল্লেখিত প্রতিটি বই-ই আসলে আগ্রহী আত্মসচেতন বাঙালির আগ্রহ নিয়ে পড়া জরুরি ও দরকারী বলেই মনে করি। বইগুলিতে কোন মতাদর্শের কৌশলে বোঝা চাপানোর চেষ্টা নেই। নেই কোন পক্ষপাতিত্ত্বের চতুরতা। আছে আপন আলোয়, নিজ চোখে দেখা তৎকালিন বাংলার প্রকৃত সমাজ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় আস্থার বর্ণনা, জলছবি। একেবারে নির্ভেজাল সহজ ভাষায় লেখার অক্ষরে বলে গেছেন লেখক। আর এ কারণেই বইগুলো পাঠকালে তিনি আমাদের পরম আপনজন হয়ে ওঠেন কথকতার একান্ত সৃজনী কুশলতায়।

৩.
কামরুদ্দীন আহমদ ১৯২৯ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩১ সালে বি.এম কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৪ সালে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ (অনার্স), ১৯৩৫ সালে এম.এ এবং ১৯৪৪ সালে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে আইন ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন।

৪. 
রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে কামরুদ্দীন আহমদ (জন্ম: ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯১২ - মৃত্যু: ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২) পাকিস্তান আন্দোলনের একজন উৎসাহী কর্মী হিসেবে গণ্য হতেন, মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসক দল মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল ও গণ-বিরোধী কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সেইসূত্রে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলনে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরের বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে রাজনীতি ত্যাগ করে কূটনীতিকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৭-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বার্মায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৬২ সালের পর থেকে আইন ব্যবসায় মনোনিবেশ ঘটান।

৫.
স্বাধীনতার নিমিত্তে ষাটের দশকে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে যে 'স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস' গড়ে উঠে তার উপদেষ্টা ছিলেন কামরুদ্দিন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং শহিদ হন । একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অক্টোবর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে এবং স্বাধীনতার পর ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। তিনি ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি (১৯৭৬-১৯৭৮) ছিলেন।

৬.
কামরুদ্দীন আহমদের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে A Social History of Bengal (1957), পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি (১৯৭৬), বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ (দুই খন্ড), স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর (১৯৮২), বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী। তার রচিত এ দেশের রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থগুলো বিশিষ্টতা অর্জন করেছে।
 
৭.
নিভৃতচারী চিন্তক, তাত্ত্বিক কামরুদ্দীন আহমদ ১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন আগ্রহী পাঠকের মনে তাঁর রচনাবলির মধ্য দিয়ে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রকৃত বিকাশে ও আত্মঋদ্ধিতে তাঁকে নিয়ে চর্চার প্রসার ঘটানো জরুরি বলেই গভীরভাবে বিশ্বাস করি।

৮.
আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুখী সমাজের কল্পনা ছিল বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাঙালি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত পর্যায়টি যদি দেখি তা হলে দেখব, বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব। বাঙালির প্রতি অন্যায্য শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আর এসব কিছুর আড়ালে একটি কথাই ছিল- বাঙালি নিজের শাসনভার পেলে সুখী হবে। ‘বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ’ গ্রন্থে কামরুদ্দীন আহমদ লিখেছিলেন, ১৯৪৭ সালে মোগলটুলিতে ওয়ার্কার্স ক্যাম্প গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের মধ্যেই দেখা যায় ক্যাম্পের আহ্বায়ক শামসুল হকের চেয়ে যুবকরা ক্যাম্পের আরেকজন প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। তাঁর মতে, “শেখ সাহেব শামসুল হকের তুলনায় সে যুগে অনেক বেশি বাস্তবধর্মী ছিলেন- তিনি প্লেটোর মতোই আকাশে তাকিয়ে থাকার প্রতিমূর্তি ছিলেন না। তিনি সেই যুবক বয়সেও এরিস্টটলের মাটির দিকে তাকিয়ে থাকা প্রতিমূর্তির মতো ছিলেন। আদর্শের চাইতে দৈনন্দিন জীবনের পক্ষে প্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল বেশি। শেখ সাহেব তত্ত্বের বা মতবাদ প্রচারের চেয়ে বাস্তবজীবনের সংগ্রামে বেশি বিশ্বাসী ছিলেন। তাত্ত্বিক আলোচনায় সময় ব্যয় না করে কর্মরত থাকায় বিশ্বাস করতেন। তাঁর চোখেমুখে একটা দীপ্তি ছিল। কর্মীদের মধ্যে, ভবিষ্যতেও যে তাঁর মুঠোয় আসতে বাধ্য সে বিশ্বাস জন্মাবার ক্ষমতা তাঁর ছিল। যেসব কর্মী তাঁর সান্নিধ্যে যেত তাঁদের সঙ্গে একটা কল্পনার সুখী সমাজের স্বপ্ন সৃষ্টি করার শক্তি ছিল।”

৯.
কামরুদ্দীন আহমেদ দীর্ঘ দিন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, ভাষা আন্দলন থেকে শুরু করে ৬৯ এর গণ আন্দোলন প্রতিটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহন করেছেন, দেশের বুদ্ধিজীবী, বিদ্বৎ সমাজের সাথে তার জানাশোনাও কম ছিলো না। তিনি প্রাকস্বাধীনতাকালে এদেশীয় বুদ্ধিজীবীদের চরিত্র নির্ধারণে যেমন যথার্থতা দেখিয়েছেন তা এখনও সাম্প্রতিক। আমাদের জাতীয় বুদ্ধিজীবী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই লোভগ্রস্ত আপোষকামীতা। তাদের অযোগ্যতায় তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বরং পার্থিব স্বার্থক্ষুন্ন হওয়ার আশংকায় অধিক উৎকণ্ঠিত থাকেন। কামরুদ্দীন আহমেদ তার "পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি" গ্রন্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বুদ্ধিজীবীদের অবস্থা বিষয়ে লিখেছিলেন, "আইন, চিকিৎসাবিদ্যা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রসমুহের বর্ধমান ব্যবহারিক গুরুত্বের ফলে এবং সমাজ ধর্মীয় শাসনমুক্ত হওয়ায় আধুনিক ইতিহাসের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল- সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দস্থানীয় পদগুলিতে বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়, সংবাদপত্রের কার্যালয় এবং শিল্পনিকেতনগুলিতে বিদ্যমান এই বুদ্ধিজীবীরা একটি দলে পরিণত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে, যাদের কাছ থেকে দেশের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লোকেরা সমাজের চরিত্র এবং নৈতিক গুণাবলী সম্পর্কে মতামত নেবে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে তা ঘটে ওঠেনি। অধিকাংশ অধ্যাপক, শিক্ষক, আইনজীবী এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা লোভের কাছে আত্মসমর্পন করেছে এবং কৃত্রিম সৈন্দর্যের আকর্ষণ এবং পার্থিব উন্নতির সম্ভবনা তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা সাধারণ লোকের চেয়ে নিজেদের অনেক যোগ্য মনে করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের যোগ্যতা ঢের কম। তাদের মধ্যে শক্তি এবং দৃঢ়সংকল্পের অভাব রয়েছে। একটি সমস্যার প্রতিটি দিক লক্ষ করার জন্য তার সূত্রের অনুধাবনে আর সক্ষম নয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের যোগ্যতাও তাদের নেই।’’

১০.
কামরুদ্দীন আহমেদের ধারনা, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিচক্ষণ রাজনীতিক বলে শেষ পর্যন্ত অনুধাবন করেছিলেন দ্বি-জাতি তত্ত্ব কোনো রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে না। আর তাই জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবু আলা মওদুদীকে তিনি কোনোদিনও পাত্তা দেননি। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান দিবসের আগে ১১ আগস্ট জিন্নাহ প্রথম গণপরিষদে যে ভাষণ দেন, তা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা। তিনি ইসলামের ইতিহাস টেনে কোনো কথা বলেননি। বলেছিলেন ইংল্যান্ডের ইতিহাস টেনে। কামরুদ্দীন আহমেদ লিখেছেন, ‘এখন আমার মতে এ উদাহরণ আমাদের সম্মুখে রাখতে হবে। আমাদের আদর্শ হিসেবে এবং আপনারা দেখতে পাবেন যে, এমন এক সময় আসবে যেদিন হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না, মুসলমান আর মুসলমান থাকবে না, ধর্মীয় অর্থে অবশ্য নয়, কারু তা হলে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস, তা হবে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে, রাজনৈতিক অর্থে।’ (পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি, পৃষ্ঠা-পরিশিষ্ট -৫)।

১১.
গতবছর কামরুদ্দীন আহমদের জন্মদিনে আমার লেখাটি পাঠ করে শ্রদ্ধাভাজন গবেষক মাযহার ভাই (Ahmad Mazharr) কিছুটা সংশোধন, সংযোজন করে দিয়েছিলেন। নানা বিভ্রান্তি নিরসনে তাঁর মতামতটি তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এথানে প্রয়োজনীয় অংশটুকু উপস্থাপন করছি।– ‘কামরুদ্দীন আহমদের The Socio-political History of Bengal, A Socio-political History of BengaL এবং A Socio-political History of BengaL and The Birth of Bangladesh প্রকৃতপক্ষে একই বইয়ের বিভিন্ন সংস্করণ। বইটির মোট ৪ টি সংস্করণ হয়েছে। বইটির প্রথম সংস্করণের বাংলা রূপান্তরেরও দুটি সংস্করণ হয়েছে। একটি সংস্করণের নাম 'পূর্ব পাকিস্তানের সমাজ ও রাজনীতি'। স্বাধীনতা-উত্তর কালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী কালে বইটির আরো দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় যা লেখকের উত্তরাধিকারীদের নিকট থেকে অনুমোদন নেয়া হয় নি। একই কাণ্ড ঘটেছে তাঁর 'মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ' বইয়ের ক্ষত্রেও। বইটির দুই খণ্ডকে এক খণ্ড এনে লখকের উত্তরাধীকারীদের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়েই প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

১২.
‘বঙ্গতাজ’ তাজউদ্দীন আহমদ গবেষক, সাংবাদিক কিবরিয়া ভাইও (Shuvo Kibria) লেখাটি পাঠ করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর মতামতের চুম্বকাংশও উপস্থাপন করা জরুরি বিবেচনায় তুলে ধরছি।– ‘চল্লিশের দশকে ঢাকায় যে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উথ্থান ঘটে তার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন কামরুদ্দীন আহমদ। বলা বাহুল্য তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক মানস গঠনকালে কামরুদ্দীন আহমদের সাহর্চ্য ছিল লক্ষণীয়। কামরুদ্দীন আহমদের লেখা , 'স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর (১৯৮২)' বইটি আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতির একাডেমিক মূল্যায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। এই জ্ঞানচর্চাকারী , রাজনীতিক মানুষটিকে নিয়ে আলোচনার জন্য সদা সক্রিয় মোহন অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। তার এই নিবেদন অব্যাহত থাকবে আশা করি।’

(অকৃপণ ঋণ / তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান, দৈনিক প্রথম আলো, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, ইন্টারনেট)

লেখক: আবদুল্লাহ আল মোহন 
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত