বর্ণীল সৌন্দর্য্যে রঙ্গিন পাখি ম্যাকাও

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২১, ১৩:০৪

সাহস ডেস্ক
আলোকচিত্র: আবুল বাশার শিবলী

নজরকাড়া রঙের ভিন্নতা, কথা বলায় দক্ষতা অর্জন এবং মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলাই ম্যাকাওকে অসম্ভব জনপ্রিয় করেছে। ম্যাকাও’র মুখের পালকের পেটার্নটি মানুষের আঙ্গুলের টিপ সইয়ের মতই স্বাতন্ত্র্য হয়, তাই সহজেই একটি ম্যাকাও থেকে অন্যটিকে আলাদা করা যায়।

ব্লু অ্যান্ড ইয়েলো ম্যাকাও বা ব্লু গোল্ড ম্যাকাও তোতা পরিবারভূক্ত সর্ববৃহৎ ম্যাকাও গোত্রের অন্যতম সদস্য। এ জাতীয় ম্যাকাওয়ের বৈজ্ঞানিক নাম (Ara ararauna)। অন্যান্য ম্যাকাও পাখির ন্যায় এটিও পোষ মানে। তবে পাখিটি বনাঞ্চল থেকে উল্লেখযোগ্য হারে শিকার হচ্ছে; ফলে এটি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এদের বংশবিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গ্রহণ করায় এটি এখনো প্রকৃতিতে বিদ্যমান।

আবাসস্থল
ব্লু গোল্ড ম্যাকাও দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অরণ্যের ম্যাকাও গোত্রের সর্ববৃহৎ প্রজাতির একটি পাখি। এদের দেহের ঊর্ধ্বাংশের পালকগুলো নীল রঙের। কিন্তু নিম্নাংশের পালক হলুদাকৃতি কিংবা সোনালী বর্ণের। সাধারণতঃ এদের বাসস্থান স্বাদুপানির এলাকায়। কিন্তু অনেক ধরনের ম্যাকাওকে দক্ষিণ আমেরিকার বন্যামুক্ত পরিবেশে কিংবা গাছ-গাছালিতে পূর্ণ বনাঞ্চলে বাস করতে দেখা যায়।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি-ড্যাড কাউন্টিতে ছোট্ট পরিসরে এদের আবাসস্থল গড়ে উঠেছে।

নামকরণ
১৭৫৮ সালে বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস ব্লু অ্যান্ড ইয়েলো ম্যাকাওয়ের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেছেন আরা আরারাউনা নামে। ১৭৯৯ সালে লেসিপিড কর্তৃক আরা গণের আবিষ্কারের পর এ পাখিটি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ছয়টি গণের একটি হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ব্রাজিলীয় টাপি ভাষা থেকে প্রজাতিটির নামকরণ হয়েছে আরা, টাপি আরারা হচ্ছে তোতা এবং উনা হচ্ছে অন্ধকার বা কালো যা পরবর্তীতে গাঢ় তোতা / ম্যাকাও নামে পরিচিতি পেয়েছে।

বিবরণ
এ জাতীয় ম্যাকাও পাখি দৈর্ঘ্যে ৭৬ থেকে ৮৬ সেমি (৩০ থেকে ৩৪ ইঞ্চি) এবং ওজনে ৯০০-১৫০০ গ্রাম (১.৯-৩.৩ পাউন্ড) হতে পারে। এরফলে পাখিটি তাদের পরিবারের অন্যতম বৃহৎ প্রজাতির পাখি হিসেবে বিবেচিত। নীল রঙের ডানা ও লেজ, ঘন নীল চিবুক, নিচের দিকে সোনালী রঙ এবং মাথার দিকে সবুজাভ রঙে সজ্জ্বিত এ পাখিটির নজরকাড়া সৌন্দর্য্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চঞ্চুগুলো কালো রঙের হয়। আবার চোখের নিচে মুখাকৃতি সাদা রঙের। মুখের নিচে ছোট কালো পালক রয়েছে। অবস্থানগত কারণে এদের গায়ের রঙের প্রভেদ লক্ষণীয় যা ত্রিনিদাদ ও ক্যারিবীয় উপকূলে দৃশ্যমান। ব্লু গোল্ড ম্যাকাও শক্ত চঞ্চুর অধিকারী যা বাদামজাতীয় শষ্যের শক্ত খোলশ ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম ও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এছাড়াও এটি গাছে চড়তে পারে ও বৃক্ষ শাখায় ঝুলে থাকতে পারে।

বুনো অবস্থায় এ ধরনের ম্যাকাও বেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গী প্রদর্শন করে। কিন্তু ছোট বাচ্চা ম্যাকাও বেশ ক্রীড়ামোদী।

প্রজনন
সাধারণতঃ ব্লু অ্যান্ড ইয়েলো ম্যাকাও পাখি তার বিপরীত লিঙ্গীয় সঙ্গীকে নিয়ে সারাজীবন একত্রে থাকে। মৃত গাছে এদের বাসা থাকে। স্ত্রী পাখিটি সচরাচর দুই থেকে তিনটি ডিম পেড়ে থাকে। প্রায় আটাশ দিন স্ত্রী পাখিটি ডিমে তা দেয়। একটি বাচ্চা প্রভাব বিস্তার করে অধিকাংশ আহার গ্রহণ করে। প্রায় ৯৭ দিন পর বাচ্চাগুলো বাসা ত্যাগ করে। পুরুষ বাচ্চাকে শুরু থেকেই রঙের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায়। উজ্জ্বল ও ঘন রঙের মাধ্যমেই পাখির লিঙ্গ নিরূপিত হয়।

তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত