মাহিন ও কাক ছানা

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ১২:৩০

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ
মাহিন সকাল সকাল ধবধবে সাদা শার্ট,আর রাতের মতো কুচকুচে কালো একটা প্যান্ট পড়ে। তার থেকে দ্বিগুণ আকারের একটা স্কুল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে স্কুলের পথ ধরে যাচ্ছিল।স্কুলে আর বাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে যাও কালীন সময়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।ধারেকাছে কোনো ঘরবাড়িও সে দেখতে পাচ্ছিল না।তার থেকে আট দশ কদম দূরে,দৈত্যের মতো বিশাল আকারের একটা বটগাছ দেখতে পেলো। সে খোলা মাঠে না দাঁড়িয়ে। গাছের নিচে আশ্রয় নিলো।
 
—বৃষ্টিও থামছে না,'বৃষ্টি রিমিঝিম ছন্দে আরও দ্বিগুণ হয়ে পড়ছিল,মাহিনের মনে হচ্ছিল বৃষ্টি খেলা করছে।তাই সে ছন্দে ছন্দে বলতে লাগল,'
 
বৃষ্টি তুমি যাও থেমে যাও
ফিরব আমি বাড়ি;
নইলে আমি আজকে দেবো
তোমার সাথে আড়ি!
 
কে শুনে কার কথা?বৃষ্টি কী আর কোনো মানুষের নাম,যে কথা মতো থেমে যেতো।বৃষ্টি থামছে না বলে,'মাহিন প্রচন্ড রেগে গেলো।মনে মনে বলছে, 'বৃষ্টি না হলে কী এমন ক্ষতি হতো।আমার তো স্কুলে যাওয়া ঠিকই আটকিয়ে দিলো।মনে মনে আবার বলতে লাগল,' দূর কী এসব ভাবছি।এর চেয়ে বরং আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।যখন বৃষ্টি থেমে যায় তখন না হয় বাড়িতে ফিরব।এখন আপাতত এখানেই বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে হবে।
 
—যেমন কথা তেমন কাজ,'এক মিনিটও দেরি না করে ঘুমিয়ে যায়।কিছুক্ষণ পরে বেসুর আওয়াজ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়।লোকালয়ে কী আর ঘুমানো যায়? সে দেখতে পেলো একটা কাকের বাচ্চা।বৃষ্টির পানিতে ভিজে টইটম্বুর!তার কাকের প্রতি মায়া হলো। বৃষ্টিতে ভিজে কাকের বাচ্চাকে নিজের কাছে নিয়ে আসল। কাকের বাচ্ছাটা শীতে তরতর করে একনাগাড়ে কাঁপতে লাগল।
 
—মাহিন কাক পাখিটাকে বলল,'এই বৃষ্টিতে তুমি বাহিরে এসেছো কেন?তোমার বাবা-মা কোথায়? কাকটা এখনো ছোট তাই স্পষ্ট করে কথা বলা শেখেনি।অস্পষ্ট ভাবে জবাব দিল,'আমি বাহির হইনি।আমাকে এক দুষ্টু হুতুম পেঁচা আমাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।সে বলল,' তোমার বাবা-মা কিছু বলেনি?কাকের বাচ্চা বলল,"বাবা-মা খাবারের সন্ধানে গিয়েছে।তাই আমাকে একা পেয়ে সে তাড়িয়ে দিয়েছে।
 
_বৃষ্টি আগের থেকে অনেকটা থেমে গেছে।তাই মাহিন কাকের বাচ্চাকে নিয়ে তাদের বাসাতে যায়।সেখানে গিয়ে দেখল,'পাজি পেঁচা হাতপা ছড়িয়ে আয়েস করে ঘুমোচ্ছে।তা দেখে মাহিন, হুতুম পেঁচাকে ডাক দিল।পর পর তিন ডাক দেওয়ার পরে হুতুম পেঁচার আরামের ঘুম ভেঙে গেলো।সে চারদিক ঝাপসা দেখছিল।বলল,'এই কালো কাকের বাচ্চা তুমি আবার এসেছিস?তবেরে তোর এখন রক্ষা নেই।
 
—মাহিন বলল,'আগে তো ভালো করে দেখ্,'তারপর দেখা যাবে কার কি হয়! হুতুম পেঁচা ভয় পেয়ে গেলো।বলল,'কাকের কথা বলার ধরণ তো এমন নয়।পেঁচা ভালো করে তাকিয়ে দেখে,'একজন মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পেঁচা বলল,'কে ভায়া তুমি আমাকে এমন করে ধমকাচ্ছ,আমি তুমি তো তোমার ক্ষতি করিনি।'
 
-মাহিন বলল,'তা-ঠিক আমার ক্ষতি করনি,তবে তুমি এতটুকু বাচ্চা কাক'কে বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে তাড়িয়ে দিছো এটা কী ঠিক করেছো?হুতুম পেঁচা বলল,'কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না সেটা তোমার থেকে শিখতে হবে?এই নিয়ে দু'জনের মধ্যে তুমুলঝগড়া বেধে গেল। এর একটু পরেই বাচ্চা কাকের মা-বাবা এসে। কিছু না জেনেই মাহিনকে দেখে রেগেমেগে মাথায় ঠুকরিয়ে রক্ত বাহির করে দিলো।
 
—হুতুম পেঁচা ঠাট্টার করে বলতে লাগল,'
সারাজীবন শুনে এলাম
উপকারীকে বাঘে খায়;
আজকে পেলাম বাস্তব প্রমাণ 
চোখের সামনে হায়রে হায়!
 
হুতুম পেঁচার মুখে এমন কথা শুনে,কাক দুটো এগিয়ে এসে'বাচ্চা কাক'কে বলল,'পেঁচা এসব কি বলছে? কে কার উপকার করেছে? বাচ্চা কাক তার বাবা-মাকে বলল,' তোমার কিছু না জেনে কেন এই মানুষ বন্ধুটিকে এভাবে ঠুকরিয়ে দিলা?তারা বলল,'আমরা তো কালো, তাই আমাদের কেউ পছন্দ করে না। বরং তাচ্ছিল্য করে ঢিল মেরে রক্তাক্ত করে দেয়।আমরা ভাবললাম সেও তাদের একজন।
 
—বাচ্চা কাক বলল,'সবাই খারাপ না মা।খারাপ তো আমাদের জাতি পশুপাখি। এই যে দেখো,' তোমরা যাওয়ার পরে এই পেঁচা বৃষ্টির মধ্যে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।আমি আরেকটুর জন্য মরে যেতাম। যদি এই মানুষ বন্ধুটি আমাকে বৃষ্টি থেকে নিজের কাছে।বাচ্চার মুখে এমন কথা শুনে বাবা-মা দু'জন অনেক লজ্জা পেয়েছে। তার কাছে বলল,'আমরা বুঝতে পারিনি।আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি।আমাদের ক্ষমা করে দিও।মাহিন বলল,' কাউকে দেখেই কোনো কিছু ভাবা ঠিক নয়,একজনের সম্পর্কে আগে সবকিছু জেনে নিতে হয়।তারপর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। 
 
—মাহিনের কথায় তারা খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করল।মাহিন কাক ছানা ও তার বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে। ভেজা শরীরে বাড়ির দিকে হাঁটছে, আর মনে মনে বলল,' বৃষ্টি হওয়ায় আজ অসহায় কাক ছানার উপকারে আসতে পেরেছি।তাতেই আমার মানব জীবন স্বার্থক।
 
—দ্বাদশ শ্রেণি,শচীন্দ্র কলেজ হবিগঞ্জ। 
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত