সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষে লাভবান চাষিরা

প্রকাশ : ৩১ মে ২০১৮, ১৬:৪৪

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় চিংড়ির পরিবর্তে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বাগদা চিংড়িতে ভাইরাস, রফতানি হ্রাস ও দাম কমে যাওয়ায় জেলায় চিংড়ি চাষিরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাঁকড়া শিল্প গড়ে তুলেছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সাতক্ষীরাতে এ শিল্পটি চাষিদের মাঝে ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে। চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়াতে লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন। এমনকি বেকার যুবকরা সরকারিভাবে কাঁকড়া চাষের উপর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে কাঁকড়া চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১১২টি সরকারি ও ৩৪০টি বেসরকারি কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আরো কয়েকটি খামার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৬-১৭ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় কাঁকড়া চাষ হয়েছে ৮৪ দশমিক ২ হেক্টর জমিতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৩ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমিতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৩ দশমিক ৩৯ হেক্টর জমিতে কাঁকড়ার চাষ হয়েছে। এছাড়া জেলায় ২০১৩ সালে দুই হাজার তিনশ’ মেট্রিক টন, ২০১৪ সালে দুই হাজার চারশো’ মেট্রিক টন, ২০১৫ সালে দুই হাজার আটশ’ ১৪ মেট্রিক টন, ২০১৬ সালে তিন হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে তিন হাজার চারশো’ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদন হয়। যার প্রায় সবটাই রপ্তানি যোগ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জে ও শ্যামনগর উপজেলায়।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলাতে মোট ৪৫২টি কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। প্রতিবছর এসব ঘেরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪-১৫ সালে জেলায় কাঁকড়ার ঘের ছিল ৩৬৪টি, ২০১৫-১৬ সালে তা বেঁড়ে দাঁড়ায় ৩৮০টিতে এবং ২০১৬-১৭ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৪৫২টিতে। এভাবে অব্যাহত রয়েছে কাঁকড়া ঘেরের সংখ্যা বৃদ্ধি।

বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। রপ্তানি তালিকায় অপ্রচলিত এই পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। যে হারে চাহিদা বাড়ছে তাতে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত গলদা চিংড়িকে অদূর ভবিষ্যতে হার মানাতে পারে।

কাঁকড়া চাষিরা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিক ভাবে রেণু থেকে বড় হয়। এ অঞ্চলের ১২ মাস লবণাক্ত পানি কাঁকড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দুটোই কম লাগে। যে কারণে চাষিরা কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।

চাষিরা জানান, বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে ছোট ছোট খাঁচায় রেখে মোটাতাজা করা হচ্ছে। ২০ থেকে ২২ দিনেই একবার খোলস পরিবর্তন করে প্রতিটি কাঁকড়া। এতে প্রতিটি কাঁকড়ার ওজন বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়। পরে এই কাঁকড়া রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতে লাভ বেশি ও রোগবালাই কম হওয়ায় সাতক্ষীরায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় কাঁকড়া চাষ পদ্ধতি।

জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের কলবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন খাস জমিতে বিশেষ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার। দুই বিঘা জমির এই খামারে সাড়ে পাঁচ হাজার খাঁচায় কাঁকড়া মোটাতাজা করা হচ্ছে। যার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে স্থানীয় বাগদী সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা।

চাষিরা জানান, খাঁচায় চাষকৃত কাঁকড়ার খোলস নরম থাকে। এ কারণে বাজার চাহিদাও বেশি। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত এসব কাঁকড়া প্যাকেটজাত করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। দামও পাওয়া যায় ভালো, কেজি প্রতি ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। আর তাই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কাঁকড়া চাষে। যার ফলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যে জেলায় ৪৫২টি কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। আর এ খাত থেকে ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানি আয়।

এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারি খরচে প্রতিদিন কাঁকড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সরদার জানান, লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় কাঁকড়া চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের মোট রপ্তানির একটি বড় অংশ সাতক্ষীরা থেকে যায়। এছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়ে যাচ্ছে বলে এই কর্মকর্তা আরো জানান।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত