পানি আছে সুপেয় পানি নেই

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:১৩

বরুণ ব্যানার্জী

পানি ছাড়া প্রাণ বৈচিত্রের অস্বিত্ব কল্পনা করা যায় না। যার অপর নাম বলা হয় জীবন। তাই জীবন ধারণের জন্য মানুষকে সর্বপ্রথম পানির কথা চিন্তা করতে হয়।

বাস্তবে দেখা যায় শহরাঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা অনেকটা নিশ্চিত হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্জলের উপজেলা ও গ্রামগুলো রয়েছে সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সেরকম একটি উপজেলা হল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। চারিদিকে পানি আর পানি। কিন্ত তা পানযোগ্য নয়।

প্রতিদিনই দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই গ্রামের মেঠো পথ ধরে পানি আনতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন গৃহবধূরা। অনেক গ্রামের নারী পুরুষ ৪ থেকে ৫ কিঃমিঃ দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে। গাবুরা, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের অনেকেই ট্রলারযোগে এলাকার অন্য ইউনিয়ন থেকে পানি সংগ্রহ করে। হিসাব করলে দেখা যায় একজন মানুষ তার শ্রম দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যে এক কলস পানি নিয়ে আসে ওই সময়ে তার শ্রমের মূল্য আসে প্রায় পঞ্চাশ টাকা অর্থাৎ এক কলস পানির দাম পঞ্চাশ টাকা। উপজেলার জনসংখ্যা তিন লক্ষ তের হাজার সাতশ’ একাশি (সূত্র-উপজেলা প্রশাসন ওয়েব সাইট) জনের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দৈনিক সুপেয় পানি পান করতে পারে না। উপজেলার অধিকাংশ নদী-নালা মৃত প্রায়। শুকিয়ে গেছে অধিকাংশ এলাকার আবাদ মহলের বড় বড় খাল। এলাকার  নলকুপের পানিতে লবন ও আয়রনের পরিমান একেবারে কম তা বলা যাবে না। সুতরাং অধিকাংশ নলকূপের পানি পানযোগ্য হয় না। অধিকাংশ মানুষ পুকুরের পানি পান করে কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে মিঠা পানির পুকুরের সংখ্যাও খুব কম।

২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা আঘাত হানার পর সুপেয় পানির অভাব গাবুরা-পদ্মপুকুরে আরও প্রকট হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংগঠন পুকুর ক্ষনন ও পূনঃক্ষননের কাজ করলেও সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা এবং মনিটরিং-এর অভাবে কাজগুলি হয়েছে নিতান্ত দায়সারা মাত্র। ফিল্টার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, কত দিন পর পরিবর্তন করতে হবে, এটি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, ফিল্টারে জমা হওয়া আর্সেনিক কোথায় ফেলতে হবে এসব পর্যবেক্ষণ করা বা নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং অনেক ফিল্টারই বিকল হয়ে আছে। উপজেলার যাবপুর গ্রামের কিছু ছাত্ররা মিলে দুটি পুকুর নেট দিয়ে ঘিরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে। এখান থেকে প্রতি নিয়ত প্রায় ২০০ পরিবার তাদের পানির সংকট মিটাতে সক্ষম হয়।

উপজেলার সদরের কাশিপুর গ্রামে বসবাসরত আদিবাসি মুন্ডা সম্প্রাদয়ের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানির জন্য হাহাকারের শেষ নেই তাদের।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত